images

জাতীয়

ছাগল বেশি রাজশাহীতে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৭ জুন ২০২২, ০৮:০২ পিএম

আগামী মাসেই কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর এই ঈদে নামাজের পর পশু কোরবানি দেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তাই এবারও ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত রয়েছেন খামারিরা। ফলে দেশে কোরবানির জন্য পশুর কোনো সংকট নেই। গতবারের চেয়ে দুই লাখ বেশিসহ এবার মোট এক কোটি ২১ লাখ কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরুর চেয়ে ছাগলের সংখ্যাই বেশি। আর দেশের আট বিভাগের মধ্যে এবার রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য ছাগল সবচেয়ে বেশি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি বছর দেশে পর্যাপ্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। যা গতবারের চেয়ে প্রায় দুই লাখের বেশি। দেশের ছয় লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি খামারের তথ্য অনুযায়ী এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে।

অধিদফতরের তথ্য মতে, আসছে ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিযোগ্য মোট পশুর মধ্যে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি গরু-মহিষ আর ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭টি ছাগল-ভেড়া রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পশু রয়েছে এক হাজার ৪০৯টি। এর মধ্যে হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৬৪২টি আর গৃহপালিত পশুর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৭টি।

এবার দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাগল আছে রাজশাহীতে। এই বিভাগে ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬৩৯টি কোরবানিযোগ্য ছাগল রয়েছে। এরপরই আছে রংপুর বিভাগ। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে এই বিভাগে ছাগল আছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৯টি। এছাড়া খুলনায় নয় লাখ ৫৫ হাজার ৩০৩টি, চট্টগ্রামে পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৬টি, ঢাকায় তিন লাখ ৮১ হাজার ৬১১টি, বরিশালে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৭০০টি, ময়মনসিংহে তিন লাখ ২১ হাজার ৯৫৪টি এবং সিলেটে ৬২ হাজার ৬১৩টি কোরবানিযোগ্য ছাগল রয়েছে।

ছাগলের পাশাপাশি ভেড়ার সংখ্যাও বেশি রাজশাহী বিভাগে। এখানে চার লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭টি ভেড়া রয়েছে। সবমিলিয়ে শুধু রাজশাহীতেই কোরবানিযোগ্য ছাগল-ভেড়া আছে ৩৩ লাখ আট হাজার ৬২৬টি। এ ক্ষেত্রে ভেড়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। এই বিভাগে কোরবানিযোগ্য ভেড়া আছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৩০টি। এছাড়া রংপুরে এক লাখ ৪২ হাজার ৩৮১টি, ঢাকা বিভাগে ৫০ হাজার ১৬০টি, খুলনায় ৩৬ হাজার ৩৮টি, সিলেটে ২৯ হাজার ৯২৩টি, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৪৯৩টি এবং বরিশালে ভেড়া আছে নয় হাজার ৬৭০টি।

গরু-মহিষ বেশি চট্টগ্রামে

রাজশাহীতে ছাগল বেশি হলেও কোরবানিযোগ্য গৃহপালিত ও হৃষ্টপুষ্ট মিলে গরু বেশি আছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে গরু আছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৩টি। এরপরই আছে রাজশাহী। এই বিভাগে মোট ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯টি গরু আছে। এছাড়া রংপুরে ছয় লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৮টি, ঢাকা বিভাগে চার লাখ ৩০ হাজার ৩২৩টি, খুলনায় চার লাখ দুই হাজার ৫৫৩টি, বরিশালে দুই লাখ ৮১ হাজার ২৫৮টি, ময়মনসিংহে দুই লাখ ১৪ হাজার ২৯৪টি এবং সিলেটে এক লাখ ৪২ হাজার ৩৩১টি কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে।

এদিকে, গরুর মতো মহিষও বেশি আছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এখানে মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৩৯৫টি কোরবানিযোগ্য মহিষ রয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে ২১ হাজার ৫২১টি, সিলেটে আট হাজার ৯৩৬টি, ঢাকায় ছয় হাজার ৯৭৫টি, খুলনায় পাঁচ হাজার ৯১৬, বরিশালে পাঁচ হাজার ৮৭১টি, ময়মনসিংহে দুই হাজার ৮৮৪ এবং রংপুরে দুই হাজার ছয়টি মহিষ আছে কোরবানিযোগ্য পশু হিসেবে।

খামারিদের হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুতেও ছাগলে এগিয়ে রাজশাহী, গরু-মহিষে চট্টগ্রাম

গৃহপালিত অংশ বাদ দিলে প্রশিক্ষিত খামারিদের কাছ যে হৃষ্টপুষ্ট গবাদি পশু এবারের কোরবানির বাজারে আসবে সেই তালিকা অনুযায়ী, কোরবানিতে আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাগল আছে রাজশাহীতে। এই বিভাগে প্রশিক্ষিত খামারিদের হৃষ্টপুষ্ট করা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল আছে। এরপরই প্রশিক্ষিত খামারিদের ছাগল বেশি আছে খুলনা বিভাগে। খুলনায় এবার খামারিদের ছাগল আছে চার লাখ ৫৭ হাজার ৯১৪টি। এছাড়া রংপুরে চার লাখ নয় হাজার ছয়টি, চট্টগ্রামে দুই লাখ ৮১ হাজার ৬১০টি, ঢাকা বিভাগে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৯৫টি, বরিশালে এক লাখ ৫৬ হাজার ২৬১টি, ময়মনসিংহে ৬২ হাজার ৪৩টি এবং সিলেট বিভাগে ২৫ হাজার ৮৫৬টি হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের ছাগল রয়েছে।

এদিকে, ছাগলের পাশাপাশি হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের ভেড়ার সংখ্যাও বেশি রাজশাহী বিভাগে। এখানে দুই লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯টি ভেড়া রয়েছে। আর ভেড়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম। এই বিভাগে হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের কোরবানিযোগ্য ভেড়া আছে ৭৬ হাজার ৪৬৫টি। এছাড়া রংপুরে ৫৩ হাজার ৯৬টি, ঢাকা বিভাগে ২৬ হাজার ১১টি, খুলনায় ১৬ হাজার ৮০০টি, সিলেটে ১৩ হাজার ৪৩৯টি, ময়মনসিংহে ছয় হাজার ৮৮৪টি এবং বরিশালে হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের ভেড়া আছে চার হাজার ২১১টি।

অন্যদিকে, হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে খামারিদের গরু আছে ১১ লাখ ৪০ হাজার ৭১৯টি। এরপরই হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের গরু বেশি আছে রাজশাহীতে, ১১ লাখ ৩২ হাজার ২৩০টি। এছাড়া রংপুরে পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৯টি, ঢাকা বিভাগে চার লাখ ২৫ হাজার ৮৫৯টি, খুলনায় তিন লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৩টি, বরিশালে দুই লাখ নয় হাজার ৪৭১টি, ময়মনসিংহে এক লাখ ৩৮ হাজার ২০৪টি এবং সিলেটে এক লাখ ২০ হাজার ৪৬৫টি হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের গরু রয়েছে।

এদিকে, হৃষ্টপুষ্ট কোরবানিযোগ্য মহিষ বেশি আছে চট্টগ্রামে, ৯২ হাজার ৫০০টি। এছাড়া রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৬৭৩টি, সিলেটে ছয় হাজার ৫৯৩টি, ঢাকায় পাঁচ হাজার ৩৫০টি, বরিশালে চার হাজার ৬০০, খুলনায় চার হাজার ৫৮৩, ময়মনসিংহে দুই হাজার ১২৪ এবং রংপুরে এক হাজার ২৪০টি হৃষ্টপুষ্ট করা খামারিদের কোরবানিযোগ্য মহিষ আছে।

খামারি বেশি রংপুরে

সারাদেশের মধ্যে রংপুরে গবাদি পশুর খামারি বেশি। রংপুরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১৮ জন খামারি রয়েছেন। এছাড়া রাজশাহীতে আছেন এক লাখ ৩০ হাজার ২৬৫ জন। পাশাপাশি খুলনায় এক লাখ আট হাজার ২২৭ জন, ঢাকায় ৯৩ হাজার ৯৫০ জন, চট্টগ্রামে ৮০ হাজার ৬৬ জন, ময়মনসিংহে ৪২ হাজার ১০৮ জন, বরিশালে ২৫ হাজার ১৯৮ জন এবং সিলেটে ১৪ হাজার ৯৭১ জন খামারি আছেন।

সার্বিক বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহাজাদা ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, এবার কোরবানি পশুর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় দুই লাখের মতো বেশি। এই খাতে খামারিও বাড়ছে। কেননা, এখানে টার্নওভার তাড়াতাড়ি হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের শীর্ষ এই কর্মকর্তা জানান, এই খাতে উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খামারিদের নিয়ে ব্যাপক কাজ করছে। সবমিলিয়ে প্রতিবছর কোরবানি পশুর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠছে খামার।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ