শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যথেষ্ট নয়, রাজপথেও থাকতে হবে: কমিশনপ্রধান

মজুরি বৈষম্য দূরীকরণ, চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিজেদের অধিকার আদায় করতে শুধু শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যথেষ্ট নয়, বরং পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন–সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সুলতান উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ যদি বৈষম্যবিরোধী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করতে চায়, তাহলে আমাদের সবার আগে চিহ্নিত করতে হবে বৈষম্যের সবচেয়ে কদর্য রূপটি কোথায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈষম্য সবচেয়ে কুৎসিত আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্যে। আয় বৈষম্যের একটা বড় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো মজুরির মানদণ্ড বা কাঠামো নেই। মজুরিতে বৈষম্যটা এত বেশি যে একচেটিয়া লাভের একটি অংশ যে মজুরির মাধ্যমে শ্রমিকেরা পাবেন, সে ব্যবস্থা নেই। কারণ, এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যেনতেন বেতনে একটা চাকরি পেলেই মানুষ টিকতে পারবে, বাঁচতে পারবে কোনো রকমে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া। বৈষম্য ভাঙতে হলে শ্রমজীবী মানুষের মজুরির জন্য যে লড়াই, সে লড়াইকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

উপযুক্ত মজুরি কাঠামো না থাকার কারণে সংবাদকর্মীরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশনপ্রধান বলেন, আপনারা শুনেছেন, দেখেছেন, গণমাধ্যমকর্মীদের কী অবস্থা। আগের দিন একজনকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আগামীকাল থেকে আর আসার দরকার নেই! এই অবস্থাগুলোর অবসানের একটা পথনকশা আমরা তৈরি করতে চাই।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের সামাজিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এখানে শ্রমজীবী মানুষদের একদম তলানিতে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যেও এমনভাবে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে; যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে না পারে। যেমন: সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চার মাস টেনেটুনে। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা কিন্তু মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না। একই সরকারি দফতরে চাকরি করে পাশাপাশি দু’জন মেয়ে, একজন ছয় মাস ছুটি পান, আরেকজন পান না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে তো ছুটিই নাই।

শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার মূল ইন্ধনদাতাদের এখনো চিহ্নিত বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। শ্রমিক হত্যার বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে জড়িত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।

এছাড়াও শ্রম আইনের যুগোপযোগী সংস্কার করে নতুন আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। রেশনিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি ন্যূনতম বেতন বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পুনর্নির্ধারণ করার দাবি জানান শ্রমিকেরা।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা, আফতাবসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতারা।

এফএ