মোস্তফা ইমরুল কায়েস
৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ পিএম
গত ২১ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় রাস্তা থেকে মিনার হোসেন ফাহিম নামে এক যুবককে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যান পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান। পরে কিছু না পেয়ে পকেটে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। শেষমেশ সেটা না পেরে তাকে থানায় নিয়ে যায়। ফাহিমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সেই পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তায় ও থানায় কয়েক দফা শারীরিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। পরদিন আদালতে চালান করে দিলে জামিনে ছাড়া পান ২৬ বছর বয়সী ওই যুবকটি।
বিষয়টি গিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেইলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বুধবার রাতে ওই যুবককে বাসা থেকে তুলে আনতে সাদা পোশাকে লোকজন যায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ নিয়ে ফাহিম ও তার পরিবারের দিন কাটছে আতঙ্কে। তাদের দাবি, এসআই মেহেদী ক্ষুব্ধ হয়ে ফাহিমকে আবারও ধরতে সাদা পোশাকের লোকজনদের পাঠিয়েছিল। তবে থানা পুলিশের ভাষ্য- তারা কোন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য বা পুলিশের কোন টিমকে ফাহিমের বাসায় পাঠায়নি।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আসে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনী সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার তার এক বক্তব্যে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সাদা পোশাকে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। বিষয়টি সবাইকে নজরে নিতে নির্দেশ দেন তিনি। তার সেই নির্দেশের পর এমন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়।
গত মঙ্গলবার রাতে যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা, ক্রসফায়ারের হুমকি! শিরোনামে ঢাকা মেইলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর থেকে ‘চাপে থাকা’ সেই এসআই আর কাউকে কিছু না বলতে স্থানীয় নেতাদের দিয়ে নানা প্রলোভন দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়।
এসআই মেহেদী হাসানের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশে যোগদান করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত সরকারের আমলে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করা অনেক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্নস্থানে বদলি করা হলেও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন এসআই মেহেদী।
গতরাতে ভুক্তভোগী মিনার হোসেন ফাহিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাই আমি তো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বড় বিপদে পড়লাম। উল্টো আমাকে এখন ধরার জন্য পুলিশ খুঁজতেছে। সন্ধ্যার পর আমার বাসায় লোকজন আসছিল। তারা দারোয়ানকে এসে জিজ্ঞাসা করেছে আমি বাসায় কখন থাকি, কখন ফিরি, কয়তলায় থাকি। এমন নানা প্রশ্ন করছে। আমার ছবিও দেখাইছে তারা। এখন আপনারাই বলেন আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাসাইলে, মারধর করল, আবার ধরার জন্য লোকজন পাঠাইছিল এসব কি!
ফাহিমের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান দাবি করেন, তিনি মিরপুর থানা থেকে ফাহিম নামে কারও বাসায় ধরার জন্য সাদা পোশাকের কোন টিমকে পাঠাননি।
এসআই মেহেদীকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি ফাহিমের বাড়িতে সাদা পুলিশ পাঠানোর দাবি সত্য নয় বলে জানান।
কী হয়েছিল ফাহিমের সঙ্গে
ভুক্তভোগী ফাহিম জানায়, গত ২১ জানুয়ারি কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে তাকে আটক করা হয়। ফাহিম থাকেন মিরপুর-৬ নম্বর এলাকা। এসময় তাকে আটকের পর ১১০ পিস ইয়াবার পটলা পকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে একটি মোটরসাইকেল যোগে তাকে থানায় নেওয়া হয়। তার বোন দুলাভাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অফিসে কাজ করেন। খবর পেয়ে সেই দুলা ভাই থানায় ছুটে যান এবং এসআই মেহেদী হাসানকে পরিচয় দেওয়ার পরও ফাহিমকে ছাড়া হয়নি। তার নামে যাতে মিথ্যা মামলা না দেওয়া হয় সেজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তিন হাজার টাকাও এসআই মেহেদী হাসানকে দিয়ে আসেন তারা। তখন মেহেদী হাসান তাদের জানিয়েছিল, তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের আইনে আটক করা হয়েছে। তার নামে মামলা হয়েছে। তাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এরপর গভীর রাতে থানার বাইরে নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ চালান দেওয়ার জন্য হুমকি দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে এসআই মেহেদী হাসানের দাবি, ফাহিম একজন মাদক কারবারি। তার থানার কাছে হওয়ায় সেদিন তিনি সাদা পোশাকে ফাহিমকে ধরে তুলে নিয়ে এসেছিলেন।
অন্যদিকে ফাহিম জানায়, তিনি একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার নামে এর আগে কখনো একটি মামলাও ছিল না। তার কাছে ইয়াবা না পেয়েই ডিএমপির আইনে সম্প্রতি দায়ের হওয়ার মামলাটি দেওয়া হয়।
এমআইকে/এমআর