images

জাতীয়

কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ কোটি ২১ লাখ পশু

ওয়াজেদ হীরা

০৬ জুন ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম

এক মাস পরই শুরু হবে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ বা ১১ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এবারের ঈদে কোরবানির জন্য এক কোটি ২১ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখের বেশি।

গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় পশুতে কোরবানির চাহিদা মিটেছে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর পর্যাপ্ত পশু বিক্রি হয়নি। ফলে পশু নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। তবে অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনা নেই। ফলে গতবারের চেয়ে কোরবানিও বেশি হবে এবং দেশীয় পশুতেই হবে। যারা গতবার পশু বিক্রি করতে পারেনি তারা নতুনভাবে স্বপ্ন বুনেছেন আসন্ন কোরবানি ঈদ নিয়ে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, দেশে এখন স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনের জন্য বছরব্যাপী খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত বছর অবিক্রিত থাকা পশুও এবারের কোরবানিতে যুক্ত হবে। ফলে এবার পশু সংকটের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তারা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখার উপপরিচালক জিনাত সুলতানা ঢাকা মেইলকে বলেন, এ বছর আমাদের পর্যাপ্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। যার গতবারের চেয়ে প্রায় দুই লাখের বেশি। ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি খামারের তথ্য অনুযায়ী এ পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত বছর ২২ হাজার ৪৭০ জন কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ বছর প্রায় ২৫ হাজার কসাইকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা এই তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তৈরি করছি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার বিভাগের তথ্যমতে, আসছে ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিযোগ্য মোট পশু আছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। এর মধ্যে প্রশিক্ষিত খামারিদের কাছ থেকেই আসবে ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৪২টি। বাকি ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৭টি কোরবানিযোগ্য উৎপাদিত পশু গৃহপালিত।

cow-3অধিদফতরের তথ্য মতে, কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭। এছাড়া অন্যান্য পশু অর্থাৎ উট, দুম্বার সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯টি। গত বছর ২০২১ সালে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮। এছাড়া অন্যান্য পশু অর্থাৎ উট, দুম্বার সংখ্যা ১ হাজার ৪০৯টি।

২০২১ সালে কোরবানিতে পশু জবাই হয়েছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে গরু/মহিষ ছিল ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি এবং ছাগল/ভেড়া ছিল ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি। এছাড়াও অন্যান্য পশু জবাই হয় ৭১৫টি। তবে এবার এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহাজাদা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, আমরা কোরবানি পশুর তথ্য নিয়ে কার্যপত্র তৈরি করেছি। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে মিটিং হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তথ্যে দেখেছি এবার কোরবানি পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। গত বছরের চেয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৬২৪টি পশু বেশি। আমি মনে করি এই খাতে খামারিও বাড়ছে। কেননা, এখানে টার্নওভার তাড়াতাড়ি হয়। এছাড়াও এই খাতে উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খামারিদের নিয়ে ব্যাপক কাজ করছে। সবমিলিয়ে প্রতিবছর কোরবানি পশুর সংখ্যা বাড়ছে।

মনজুর মোহাম্মদ শাহাজাদা আরও বলেন, অসাধু পন্থায় পশু মোটাতাজাকরণ নিয়ে আমার বরাবরই সতর্ক থাকি। এবারও প্রতিটি উপজেলায় দুটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। রাজধানীর প্রতিটি হাটে মেডিক্যাল টিম দেওয়া হবে। হাটে হঠাৎ পশু অসুস্থ হলে এখান থেকে পরামর্শও মিলবে।

কোরবানির আগে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। এর ফলে দেশের খামারিরা গরুর দাম কম পায় বলে  অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আমদানি নীতিতে এখন একটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন গরু, গরু/মহিষের মাংস এসব আমদানি করতে হলে আগে আমাদের অধিদফতরের অনুমতি দরকার হবে। এর আগে এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিতো। আমাদের অনুমতির দরকার হতো না। সে কারণে ইচ্ছে করলেই ভারতীয় গরু প্রবেশ ব্যাপকহারে হওয়ার সুযোগ নেই।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মুখপাত্র (পরিচালক, অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০২১ সাল থেকে অদ্যবধি সকল করিডোর বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কোরবানির আগে গরু মোটাতাজাকরন ওষুধ জব্দ করা হয়। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০টি গরু মোটাতাজাকরণ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।    

 

cow-5অধিদফতরের তথ্যে জানা গেছে, এ বছর সবচেয়ে ভালো পশু উৎপাদন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ খামারির কাছ থেকে আসবে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি পশু। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। এ বিভাগের ৮৬ হাজার ৩৬ জন খামারির কাছ থেকে আসবে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১১৪টি পশু। এছাড়া রংপুর বিভাগের ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪০ খামারির কাছ থেকে আসবে ১০ লাখ ৩ হাজার ২৮১টি পশু। খুলনা বিভাগ থেকে আসবে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫১টি পশু। ঢাকা বিভাগ থেকে আসবে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৬টি পশু। বরিশাল বিভাগ থেকে আসবে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৩টি পশু। ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে আসবে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪৪ টি পশু এবং সিলেট বিভাগ থেকে আসবে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৩ টি পশু।

গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পশু কোরবানি হয়েছে গত ঈদুল আজহায়। গত মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কোরবানিযোগ্য ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৫২৩টি পশু অবিক্রীত থেকে যায়। এতে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন খামারি ও ব্যাপারীরা। আয় কমে যাওয়ায় কোরবানি কম হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সারা বছর দেশে যে পরিমাণ গবাদিপশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে কোরবানিতে। কয়েক বছর আগেও কোরবানির জন্য পশু আমদানি করতে হতো প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে বৈধপথে ভারতীয় গরু আমদানি কমতে থাকে। ওই সময় থেকে নিজেরা সক্ষম হতে বাড়তি পদক্ষেপ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে দেশেই বাড়তে থাকে কোরবানিযোগ্য পশু এবং খামারির সংখ্যাও।

বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে ২০১৬ সালে কোরবানির পশুর সংখ্যা প্রথমবারের মতো কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০১৫ সালে দেশে কোরবানির জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার, যা ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪ লাখের বেশি। ২০১৬ সালে ৯৮ লাখ ১৩ হাজার পশু কোরবানি হয়। ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪ লাখ কোরবানি হয়। ২০১৮ সালে ১ কোটি ৬ লাখ এবং ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কোরবানি হয়।

২০২০ সালে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ওই বছর কোরবানি কমে দাঁড়ায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩।

গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৭ হাজারে। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর আরও কমে যায় কোরবানির পশুর সংখ্যা। গতবার সারাদেশে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু কোরবানি হয়। তবে এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা বাড়ার প্রত্যাশা করছেন কর্মকর্তারা।

বেশি পশু রাজশাহীতে, কোরবানি বেশি ঢাকায়

দেশে সবচেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত আছে রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ খামারির কাছ থেকে আসবে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি পশু। এর মধ্যে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৩টি গরু মহিষ রয়েছে। আর ছাগল ভেড়া রয়েছে মধ্যে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪৯ টি, অন্যান্য পশু প্রস্তুত ৮টি। তবে সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয় ঢাকা বিভাগে। এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম।

cow-1গত বছর ঢাকা বিভাগে পশু জবাই হয়েছে ২২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫২টি পশু। এর মধ্যে গরু মহিষ ছিল ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৩টি এবং ছাগল ভেড়া জবাই হয় ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬টি অন্যান্য পশু ছিল ৩৬৩টি।

এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রামে গতবার কোরবানিতে জবাই হয়েছে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৮টি পশু। যার মধ্যে গরু মহিষ ছিল ১০ লাখ ৭১ হাজার ২৩১টি। ছাগল ভেড়া ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮৬ টি এবং অন্যান্য ২০১টি পশু জবাই হয়।

গো-খাদ্যের বাড়তি দাম প্রভাব পড়বে বাজারে

অন্যান্য জিনিসপত্রের মতো হু হু করে বাড়ছে পশু ও প্রাণীর খাদ্যর দামও। গত কয়েক মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে গোখাদ্যের। এতে পশু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। আসন্ন কোরবানির বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গতবারের চেয়ে এবার পশু কিনতে বেশি দাম গুণতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গো-খাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন বহু খামারি বা ছোট কৃষক পরিবার।

বাজারে ঘুরে জানা গেছে, গমের ছাল প্রতি বস্তা (৩৫ কেজি) ১৯০০ টাকা। সরিষার খৈল প্রতি কেজি ৫৫, ছোলার ভূসি ৫৫, খেসারি ৫৬- ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভুট্টা পাউডার, চালের খুদ, খৈল ও চিটাগুড়েরও দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সব গো-খাদ্যের দাম প্রতি মণে অন্তত দুশো টাকা বেড়েছে।

চাষিরা জানান, ছয় মাস আগে একবস্তা ভালোমানের গমের ছাল বিক্রি হয়েছে ১২০০-১২৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৯৫০-১০০০ টাকা। একইভাবে ছয় মাস আগে মাসকলাইয়ের ভূসির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১১০০-১২০০ টাকা। এক বছর আগে এক বস্তা খৈল বিক্রি হয়েছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৩৩০০-৩৪০০ টাকা। ছয় মাস আগে ডালের ভূসির বস্তা (৩৫ কেজি) ছিল ১২০০ টাকা, অ্যাংকর ডালের ভুসি ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরও ধীরে ধীরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সয়ামিল রফতানি চালু রাখা ও গম আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবে কাঁচামালের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ অবস্থায় শুধু যে মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্যের দাম বেড়েছে তা নয়, ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের উদ্যোক্তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। কাঁচামালের সংকটে ছোট ও মাঝারি বেশকিছু ফিড মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

২০২০ সালের মার্চে ভুট্টার কেজি ছিল ২৪.১৭ টাকা, এই মে মাসে তা হয়েছে ৩৫ টাকা। ৩৭.২৫ টাকার সয়াবিন মিলের দাম এখন ৭০ টাকা। ৩৮.৫০ টাকার ফুল ফ্যাট সয়াবিনের দাম হয়েছে ৭৬ টাকা। ২১.২৫ টাকার রাইস পলিস কিনতে হচ্ছে ৩৬.৩৩ টাকায়। ১৩৩.৩৩ টাকার এল-লাইসিন ২৫০ টাকা, ২০০ টাকার ডিএলএম ৩৩০ টাকা, ৫৪ টাকার পোলট্রি মিল ১১০ টাকা এবং ১০০ টাকার ফিশ মিল কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

ফিড তৈরিতে ৫০-৫৫ শতাংশ ভুট্টা এবং ৩০-৩৫ শতাংশ সয়ামিলের দরকার হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়ামিলের দাম ৩০ শতাংশ এবং ভুট্টার দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে। গত আগস্টে সয়ামিলের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৪ টাকা, এই মার্চে হয়েছে ৭০ টাকা। বর্তমানে বাজারে সয়ামিল ৬৬ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাণিখাদ্য তৈরির প্রধান উপকরণ সয়ামিলের 'কৃত্রিম সংকট' সৃষ্টির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের সয়ামিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্তভাবে সয়াবিন বীজ আমদানি করে। সেখান থেকে সয়াবিন তেল উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে পাওয়া সয়ামিল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। দেশের মানুষের স্বার্থে শূন্য শুল্ক সুবিধায় আনা সয়াবিন বীজ থেকে উৎপাদিত সয়ামিল তিন থেকে চারটি সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি বেশি মুনাফার লোভে রফতানি করে দিচ্ছে। উৎপাদনকারীরা বর্তমানে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

cow-2শাহ এমরান বলেন, কোরবানির গরু পর্যাপ্ত আছে। সমস্যা হলো খাদ্যের দাম বেশি। গত এক বছরে পশুখাদ্যের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। খাদ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব তো কোরবানির পশুর বাজারে অবশ্যই আসবে। দাম তো কিছুটা বাড়তি হবেই।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে জানান, ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পর্যাপ্ত গবাদিপশু সরবরাহ ও বিপণনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানি করে পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দ্রুতই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিস্তারিত নির্দেশনা দেবেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মন্ত্রণালয়েয় কর্মকর্তারা আরও জানান, করোনার প্রকোপ কম থাকলেও কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য একটি নির্দেশনা থাকবে। এছাড়াও কোরবানির পশু পরিবহনে রাস্তায় চাঁদাবাজি যেন না হয়, চাঁদাবাজির ইস্যুতে দীর্ঘসময় প্রাণী বহনকারী ট্রাক আটকে না থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে মন্ত্রণালয়।

গবাদিপশু বিপণন ও পরিবহন সমস্যা সমাধানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে হটলাইন স্থাপন করা হবে যেখান কর্মকর্তারা সর্বক্ষণিক হটলাইনে সম্পৃক্ত থাকবেন বলে জানা গেছে।

ডব্লিউএইচ/এমআর