images

জাতীয়

আলোচনায় ‘গণপরিষদ নির্বাচন’, কী হচ্ছে ঘোষণাপত্র নিয়ে? 

নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম

হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘জুলাই বিপ্লব’ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করে। সরকারের পতনের চার মাস পর, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করার উদ্যোগ নেয় তারা। তবে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তীব্র আপত্তির কারণে, সরকারই এই ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের কথা জানায়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা এবং ঘোষণাপত্র পাঠ না করার কথা জানান।

তবে, ঘোষণাপত্র নিয়ে কৌতূহল থামছে না। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে খসড়া প্রস্তুত করেছিলেন, তার মধ্যে কী কী বিষয় থাকবে, এবং সরকারের প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ কতটা স্থান পাবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। ছাত্রদের ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ রাজনীতিতে বিভেদ বাড়াতে পারে এমন আশঙ্কা বিএনপি এবং অন্যান্য দলের মধ্যে ছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে— সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সেই বিভেদের শঙ্কা কাটানো যাবে?

এছাড়া, মঙ্গলবার শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘গণপরিষদ নির্বাচনের’ বিষয়টি সামনে এনেছেন, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের এই বক্তব্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে, তারা আসলে কী চাচ্ছেন? সরকারের মধ্যেও এই বক্তব্য নিয়ে অসস্তি দেখা দিয়েছে।

১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদ’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি করছে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাদের প্রশ্ন, সরকার প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রে এই দাবি কতটা জায়গা পাবে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারের ওপর আস্থা রাখছেন, কিন্তু একই সাথে তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যদি ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত না হয়, তবে সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্র মেনে নেওয়া হবে না।

বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করতে চান না। তারা মনে করেন, সংবিধানের কিছু অংশ সংস্কার করা উচিত, তবে পুরো সংবিধান বাতিল করা দেশের জন্য অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আশা করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাদের মতে— সংবিধান বিভিন্ন সময়ে এতো কাটাছেঁড়া হয়েছে, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। তারা আরও মনে করেন, এই সংবিধান দিয়ে তিনটি অবৈধ নির্বাচন হয়েছে, যা জনগণের কোনো ম্যান্ডেট পায়নি।

ছাত্র প্রতিনিধিরা গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা তারা মনে করেন একটি নতুন সংবিধান রচনার পথে সহায়ক হবে। এই নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা পরবর্তীতে সংবিধান পুনর্লিখনে কাজ করবেন এবং সংসদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মতে, এটি দেশের শূন্যতা পূরণ করবে, যা অতীতে দেখা গেছে।

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, একমাত্র সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। এদিকে, ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিলের দাবি তুলে তারা দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করতে চান। তাদের মতে, বর্তমান সংবিধান দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে।

এছাড়া, জুলাই বিপ্লবের খসড়া ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস, ঔপনিবেশিক শাসনামলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের সমালোচনা উল্লেখ ছিল। ছাত্ররা মনে করেন, এই সংবিধান শুধু মানুষের মৌলিক অধিকারই ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবৈধ করেছে। তাদের মতে, শেখ হাসিনার সরকার ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে এবং রাষ্ট্রীয় মদদে বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, যতদিন পর্যন্ত ১৯৭২ সালের সংবিধান বিদ্যমান থাকবে, ততদিন দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমাদের দাবি, সরকার ঘোষণাপত্রে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

ন্যাশনাল সিটিজেন কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো ঘোষণাপত্রে লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। গতকাল সরকার এই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলেছেন, এটি আমাদের অর্জন। আমরা চাই, এই ঘোষণাপত্রে আমাদের ভাইদের চোখ-হাত হারানোর কথা, এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা থাকতে হবে।

ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেন, বর্তমান সংবিধান এত কাটা-ছেঁড়া হওয়ার পর, তা যদি কার্যকর থাকে, তাহলে জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন বিফলে যাবে। আমরা বলেছি, ১৯৭২-এর সংবিধান পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্রে আমরা আশা করি, দেশে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জুলাই বিপ্লবের ঘটনাবলী স্থান পাবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যতদিন পর্যন্ত পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। তাই, আমাদের দাবি, ‘৭২-এর সংবিধান বাতিল করে একটি নতুন সংবিধান রচনা করা উচিত। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এই কাজ করতে পারবেন।’

সবশেষে, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারের প্রতি আস্থা রেখেও জানান, তারা সরকারের ঘোষণাপত্রে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন চান। তবে, যদি তাদের দাবি না মানা হয়, তারা সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্র মেনে নেবেন না।

এইউ