নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম
বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যে মন্তব্য করেছেন তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না’ বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু ঘিরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দেওয়া বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, জাতিসংঘ যাতে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠায়, সেজন্য তাদের সাথে আলোচনা করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সঙ্গে এই বিষয়ে ভারত সরকার কথা বলুক যাতে সেখানে তারা শান্তি বাহিনী পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।’
বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ডার সিকিউরিটি কেন্দ্রের আওতায়। আমাদের এখতিয়ার বা দায়িত্বে নেই। আমরা হাউজের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী যেন সংসদে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা থাকে কোনো ব্যাপারে তাহলে বিদেশমন্ত্রী যেন সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানান যে কেন্দ্র এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মমতা বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় পরামর্শ, যদি এ জাতীয় ঘটনা (সহিংসতার) ঘটতে থাকে তাহলে আমরা আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে আনব। সরকার উদ্যোগ নেবে। তারা ফিরে এলে থাকার, খাওয়ার কোনো সমস্যা হবে না। কোনো ভারতীয়র ওপর অত্যাচার হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।’
মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্যকে আমরা মমতা ব্যানার্জী ধরনের মন্তব্য হিসেবেই দেখতে চাই, কারণ উনি এই বক্তব্য কেন দিলেন, এটা আমি বুঝতে পারছি না। কলকাতায় আমি দীর্ঘদিন ছিলাম, তার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা তার জন্য খুব সুষ্ঠু পদক্ষেপ না, রাজনৈতিকভাবে।
উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক বিতর্ক সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ভাবেই দেখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না। এটা অবশ্য আমার মত।
ভারতের সাথে আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক তাহলে কেমন হতে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ৫ তারিখের (আগস্ট) পর থেকে আগের সম্পর্ক আর পরের সম্পর্ক এক না। সম্পর্কে যে সমস্যা আছে, সেটা আমরা স্বীকার করি। একটা সমস্যা স্বীকার করলে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। আমরা ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক ভালো সুসম্পর্ক চাই, পরস্পরের স্বার্থ ঠিক রেখে।
উপদেষ্টা বলেন, আসলে ৫ তারিখের আগের আর পরের সরকারের সাথে কিছু তফাৎ আছে। সেটার সাথে অ্যাডজাস্ট করতে কেউ কিছু সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে, বাস্তবতা মেনে নিয়েই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকভাবে খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে – এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে রয়েছে। সেই প্রচেষ্টা যেন সফল না হয় সে প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, প্রধানত ভারতের মিডিয়া এই ধরনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে এবং আরও কিছু দেশের মিডিয়া ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে একই ধরনের খবর প্রকাশ করছে।
বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, এই সরকার কোনো ধরনের কোনো সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাশত করবে না। সেটা হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা না, সবাইকে আমরা সমান চোখে দেখব, সেই বার্তাই আমরা সবাইকে দিতে চেয়েছি। আইন তার নিজের মতো চলবে, সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে অবশ্যই শক্ত হাতে দমন করা হবে।
জেবি