জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
প্রায় এক বছর ধরে ইতালি দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেও ভিসা পাচ্ছেন না হাজারো ভুক্তভোগী। দূতাবাসের মেইলে জমা পড়েছে এক লাখের মতো আবেদন। কাগজপত্র কিছু ঠিক থাকার পরও দূতাবাস থেকে আবেদনকারীদের কোনো সাড়া দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য ভিসা আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি চায় আবেদনকারীরা। পাশাপাশি বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। দ্রুত ভিসা আবেদনের নিষ্পত্তি করা না হলে আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন ভুক্তভোগীরা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ইতালি যেতে ইচ্ছুক ও ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদনকারী ভুক্তভোগীরা। ইতালি গমনেচ্ছুক অ্যাপোয়েন্টমেন্ট ভুক্তভোগীরা ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগীদের পক্ষে আবেদনকারী রিগান উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘গত ১ মে থেকে এ পর্যন্ত আমরা যারা ইমেল করেছি, প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আমাদের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্লট দেওয়া হয়নি। মেইল করার আরও ১ থেকে ২ মাস আগে আমাদের নোলস্তা (ওয়ার্ক পারমিট) ইস্যু হয়। সে হিসেবে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আমাদের প্রকৃত অপেক্ষা ৭ থেকে ৮ মাস। আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রাখায় বর্তমানে অ্যাপয়েন্টমেন্টে ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রায় ২০-২৫ হাজার ছাড়িয়েছে।’
রিগান উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে ভিএফএস গ্লোবালের (ইতালি যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ভিসা প্রসেসিং ভারতীয় এজেন্সি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি বর্তমানে ইতালি অ্যাম্বাসি তদারকি করছে বলে জানানো হয়। কবে নাগাদ অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া শুরু হবে ভিএফএস কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে নিদিষ্ট কোনো তথ্য নেই। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় আমরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশীরা মানসিকভাবে চরম হতাশ ও উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছি না বিষয়টি নিয়ে সরকার ও প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার মেইল জমা পড়েছে। আমরা তো অবৈধ না। তাহলে আমাদের কেন যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ভিসা দেওয়া শুরু করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে নামব।
এসময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে- বন্ধ থাকা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রক্রিয়া চালু করে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাকলকে থাকা মেইলের দ্রুত অ্যাপয়েন্টমেন্ট ধারাবাহিকভাবে দেওয়া শুরু করতে হবে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইমেইলের ৩০ দিনের মধ্যে ভিসা আবেদন জমার ব্যবস্থা করে আবেদনগুলো ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ভিসা আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে ভিএফএস গ্লোবাল কর্মী ও অফিসারদের অসৌজন্যতামূলক আচরণ ও সকল ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া পর্যন্ত ব্যাকলকে থাকা ইমেল চেকিং ও ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ দিতে হবে, নিয়োগকর্তাদের পক্ষ থেকে কর্মীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে অ্যাম্বাসি বা ভিএফএস গ্লোবালে যোগাযোগ করা হলে দ্রুত সাড়া দিতে হবে ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যে কোনো ধরনের বাণিজ্য, দালালের দৌরাত্ম, প্রতারকদের হয়রানিসহ সব ধরনের হয়রানির পথ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে শীঘ্রই কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিএমডিএফ) সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, সাধারণ সম্পাদক সামসুন নাহার আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, বিএমডিএফ ও ইতালবাংলার সদস্য মোহাম্মদ আলী, শাহ আবিউর রহমান, মাসুদ পারভেজ ও ইতালির জন্য ভিসার আবেদনকারী ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন, নাজমুল হক, মাহবুব, সাকিব।
এমআইকে/এমআর