images

জাতীয়

আবরার ফাহাদ হত্যা, কী ঘটেছিল পাঁচ বছর আগে?

ঢাকা মেইল ডেস্ক

০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

images

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডটি পাঁচ বছর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বিশাল ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। এ ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনও সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা বিবিসিসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়।

আবরারের হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা আসে বুয়েটে। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে প্রতিবাদকারীদের মিছিল ও পোস্টারে বারবার আবরার ফাহাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অনেকের মতে— আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ হত্যাকাণ্ড ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের একটি প্রতীকে পরিণত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, আবরার হত্যাকাণ্ড জাতির ইতিহাসে একটি ‘বাক পরিবর্তনকারী’ ঘটনা। এর ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়েছে এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে।

তিনি বলেন, “আবরার হত্যাকাণ্ড একটি মাইলফলক ঘটনা, যা ক্ষমতাসীনদের প্রতি ক্ষোভ ও ছাত্র রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এটি সন্ত্রাস নির্ভর ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।”

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন আবরার ফাহাদ। ঘটনার সময় তিনি কুষ্টিয়া থেকে বুয়েটে ফিরেছিলেন। ফেসবুকে ভারত বিরোধী একটি পোস্টের জের ধরে রাত ৮টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ৩টার দিকে তার লাশ পাওয়া যায়।

পুলিশ পরে জানায়, আবরারকে ‘শিবির আখ্যা’ দিয়ে দুই দফায় মারধর করা হয়। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

এদিকে, চলতি বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আবরার ফাহাদের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিতে কেন রুল জারি করবে, তা জানতে চেয়েছে।

আবরারের হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। হত্যাকাণ্ডের পেছনে আবরারের ফেসবুক পোস্ট এবং অভিযুক্তদের ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে।

আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিবিসি, রয়টার্স, গালফ নিউজ, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আবরার হত্যাকাণ্ড এবং এর প্রতিবাদে ছাত্র বিক্ষোভের খবর প্রকাশিত হয়।

কী ঘটেছিল সেদিন
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, সেদিন তিনি কুষ্টিয়া থেকে বুয়েটে এসে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ কক্ষে ছিলেন। ফেসবুকে ভারতবিরোধী একটি পোস্টের কারণে রাত ৮টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তী সময়ে রাত তিনটার দিকে জানা যায়, আবরারকে হত্যা করে একতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়েছে। পরে জানা যায়, আবরারকে ‘শিবির আখ্যা’ দিয়ে দুই দফায় দুটি কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয় এবং বুয়েট মেডিকেলের ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ২টার দিকে টহল পুলিশের একটি দল হলের গেটে গেলেও তাদের হলের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে চারটার দিকে পুলিশ আবার হলে যায় এবং ডাক্তার মৃত ঘোষণার পর আবরারের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তদন্ত শেষে তখনকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবরারকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করার বিষয়টি হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল, কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়।

তিনি জানান, অভিযুক্তদের সমীহ করে সালাম না দেওয়ার বিষয়টিও হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি কারণ। তারা র‍্যাগিংয়ের নামে আতঙ্ক তৈরি করেছে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা আবরারকে পিটিয়ে অন্যদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যাতে অন্য শিক্ষার্থীরা তাদেরকে সমীহ করে সালাম দেয়। অভিযুক্তরা বুয়েটে ‘ভয়ের রাজত্ব’ কায়েম করতে চেয়েছিল, এই ধারাবাহিকতায় আবরারের উপর হামলা করা হয়। পরে মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ১১ জন সরাসরি জড়িত এবং বাকিরা পরোক্ষভাবে জড়িত। গ্রেফতারদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলার এজাহারে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাসহ প্রথমে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তবে তদন্তের পর আসামির সংখ্যা বেড়ে পঁচিশে দাঁড়ায়।

ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি আল নাহিয়ান জয় তখন বলেন, "অনেক সময় অতি উৎসাহী কিছু নেতাকর্মী ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এ ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবে সমর্থন করা হবে না।"

এইউ