কাজী রফিক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ পিএম
- পায়ে হেঁটে চলার চাইতে যানবাহনের গতি কম
- দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
- বেড়েছে অবৈধ পার্কিং ও উলটোপথে চলার প্রবণতা
- আতঙ্ক কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে
রাজধানীর মিরপুর রোডের রাপা প্লাজা থেকে শ্যামলী পর্যন্ত দূরত্ব তিন কিলোমিটার৷ বাসে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে এই পথ পাড়ি দিতে এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অথচ পায়ে হেঁটে এই দূরত্ব এর চেয়ে কম সময়ে অতিক্রম করা সম্ভব। একই অবস্থা ধানমন্ডি সাত সমজিদ রোডে। জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। পায়ে হেঁটে এই দূরত্ব অতিক্রম করা যায় পৌনে এক ঘণ্টার কম সময়ে৷ তবে মঙ্গলবার সকালে গাড়িতে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে আবু রায়হানকে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তার ভাষ্য, প্রতিটি সিগন্যাল পয়েন্টেই ট্রাফিক পুলিশ আছে। তবে নেই শৃঙ্খলা।
মঙ্গলবার একই অভিজ্ঞতা হয় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর (বাংলাদেশ আই হাসপাতাল) সিগন্যালে। মোহাম্মদপুর থেকে সংকর, সংকর থেকে মোহাম্মদপুর, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল থেকে রাপা প্লাজা, রাপা প্লাজা থেকে বাংলাদেশ আই হাসপাতালমুখী গাড়ির চাপ দেখা গেছে এদিন দুপুরে। একই সঙ্গে দেখা গেছে বিশৃঙ্খলাও।
নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দিক থেকে উলটোপথে ঢুকছে বিভিন্ন যানবাহন। যার একটা বড় অংশই ব্যাটারিচালিত রিকশা। এলোমেলো চলাচলের কারণে সিগন্যাল পয়েন্টে বাড়তি সময় ব্যয় হচ্ছে।
এক কিলোমিটার দীর্ঘ ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের সর্বত্রই দেখা গেছে অবৈধ পার্কিং। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয় এবং বিপণিবিতানে আসা গাড়িগুলো দখল করেছে সড়কের প্রায় অর্ধেক।
সাত সমজিদ রোডের দীর্ঘজটের নেপথ্যে রয়েছে- লালমাটিয়া অংশে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের সামনে সড়কের এক লেন বন্ধ করে গাড়ি পার্কিং। ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকার একটি ভবনের নিরাপত্তারক্ষী মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান সড়কে যানজটের কারণ। বলেন, রিকশা, মোটরসাইকেল সব উল্টাপাল্টা চলাচল করে। এখন তো ব্যাটারির রিকশাও আছে। তারা তো সুপারম্যান। যেভাবে মন চায়, সেভাবে চলে। উল্টাপাল্টা চলাচল কইরা সবাই একটা ঝামেলা লাগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
একই অবস্থা পান্থপথ সড়কের দুই পাশে। সড়কের দুই পাশের দুই লেনে গাড়ি পার্কিং দেখা গেছে শ্যামলি রিংরোড এলাকায়।
স্থানীয়দের মতে, সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না হলে যানজট কমানো সম্ভব নয়।
এদিনে শ্যামলী শিশুমেলার সামনে দেখা যায় রিকশার ভয়ানক নৈরাজ্য। মূল সড়কের অর্ধেকের বেশি দখল করে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে রিকশাচালকদের। পাশেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স। সড়কে দীর্ঘ জট তৈরি করে রিকশাচালকরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সেদিকে নজর নেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার চার রাস্তার মোড়ের অবস্থা আরও করুণ। স্থানীয়দের মতে, যাত্রীবাহী ছোট পরিবহনগুলো এখানে বড় নৈরাজ্য তৈরি করেছে, যা চরম দুর্ভোগের কারণ। রিকশা, ইজিবাইক, নগরে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোকে রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে থাকতে দেখা যায়।
যদিও পাশেই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে তাদের দায়িত্ব পালনের ধরণকে ‘দায়সারা’ বলে মনে করেন নগরবাসী।
ট্রাফিকের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পাঠাও চালক মোহাম্মদ রিপন হোসেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ তো ডিউটি করে না৷ শুধু দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে মনে হয় তাদেরকে জোর করে ডিউটি করানো হচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগের এমন ভূমিকার কারণেই পুরো রাজধানী অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। সড়কে চলাচল করতে ব্যয় হচ্ছে বাড়তি সময়। একই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগ আদৌ কবে থেকে পুরোপুরি সক্রিয় হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নাজমুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ফ্লাইওভারসহ সব জায়গায় যাচ্ছে৷ আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রোল করার৷ পুলিশের একার পক্ষে এটা কন্ট্রোল করা সম্ভব না। জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। এলাকার মধ্যে চলছে, সেটা একটা বিষয়৷ কিন্তু এখন সেটি মূল সড়কে যাচ্ছে৷ জনগণকে নিজের নিরাপত্তা বুঝতে হবে। তাহলেই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সড়কে ট্রাফিক পুলিশ কঠোর হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে৷ আপাতত আমরা রাস্তাটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি৷ বাকিটাও হচ্ছে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সড়ক ছেড়ে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় সড়কের ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করেন ছাত্র-জনতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুনরায় সড়কে আসে পুলিশ। কিন্তু আইন ভাঙলেও গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মামলা হচ্ছে না, তা না। হচ্ছে। যেখানে আগে এক হাজার মামলা হতো, এখন সেখানে দুই-আড়াইশ হচ্ছে৷ আবার মামলাটাও সমাধান না। আমরা চাই জনগণ ট্রাফিক আইন মেনে চলুক। এখানে আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।
ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সড়কের অবৈধ দখল অপসারণ এবং সড়ক স্বাভাবিক রাখতে জোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কারই