images

জাতীয়

মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক বিজয়, চাওয়া পরিবারের

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লক্ষ্মীপুর জেলায় শহীদদের অন্যতম কাউছার ওয়াহিদ বিজয়। চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক একদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে গুলিতে তার মৃত্যু হয়। কাউছার লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মেঝো ও ভাইদের মধ্যে বড় বিজয়কে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। বিচারের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের চাওয়া, মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকুক বিজয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর সাথে সংঘর্ষে মোট চারজন শিক্ষার্থী মারা যায়। তারা হলেন— ওসমান গনি, কাউছার ওয়াহিদ বিজয়, মো. সাব্বির ও আফনান পাটোয়রী। লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন টিপুর বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বিজয়সহ তিনজনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে আফনান নামে অপর শিক্ষার্থীর মৃত্যু। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা অস্ত্রধারী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর উপর পাল্পা হামলা চালায়। অনেকেই গণপিটুনি দেওয়া হয়। এতে অন্তত ৮ জন মারা যায়। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক হন।

এসব ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এর দুইটি পুলিশের পক্ষ থেকে এবং অপর দুইটি হতাহতের পরিবার পক্ষ থেকে করা হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে ইতিমধ্যে সাব্বির ও কাউছারের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

মানুষ যেন আমার ভাইকে না ভুলে

বিজয়ের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। তার বাবা চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে বেকার। তার মা গৃহিনী, বড় বোনোর বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছোট ভাই কাদের আমিন বিপুল ২০২৪ সাথে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বিজয়ের মতো তার ছোট ভাই বিপুলও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

Quota_Kawsar--Inner-01

বিপুল ঢাকা মেইলকে বলেন, আন্দোলনের বেশিরভাগ দিনে দুই ভাই একসাথে অংশগ্রহণ করেছি। ঘটনার দিন আম্মু বারবার আমাদের না যেতে বলেছিলেন। একরকম জোর করেই আমরা বাসা থেকে বের হই। তবে ওইদিনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বাঁধার কারণে একসাথে যাইনি। হাজীপাড়া থেকে মান্দারি পর্যন্ত দুই-তিনবার ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষের কারণে আমি দুপুরে বাড়ি চলে আসি। ভাইয়া কোনোভাবে আন্দোলনের মূল পয়েন্টে যায়। ওইদিন দুপুর দুইটার দিকে আমাদের সর্বশেষ কথা হয়। মোবাইলে ভাইয়া জানায়, সে নিরাপদ আছে। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কর্মসূচি শেষ হবে। তখন সে বাসায় ফিরে আসবে উল্লেখ করে আমাকে বাসায় চলে যেতে বলে।

কিন্তু বিকাল চারটার দিকে ভাইয়ার বন্ধুরা কল দিয়ে জানায় যে তার গুলি লেগেছে। তখন বাসার সবাই এটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিল। সবাই কান্নাকাটি করছিল। তখনও আমি অনেকটা শক্ত ছিলাম। আমি ভাবছিলাম, আন্দোলনে অনেকেরই গুলি লাগে। তার বন্ধুরা আমাদের বলেনি গুলিটা ঠিক কোথায় লেগেছে বা ভাইয়া কি অবস্থায় আছে।

ভাইয়ের মৃত্যু ও হত্যাকারী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে চারটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছাই। দেখি ভাইয়াকে একটা বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার শরীরে মাত্র একটি গুলি লেগেছে। তবে তা একদম বুকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও যুবলীগের নেতা সালাউদ্দিন টিপুর গুলিতে আমার ভাইয়া মারা গেছে। এটা উপস্থিত সবাই দেখেছে।

বিপুল আরও বলেন, আমি মনে করি, আন্দোলনে মারা যাওয়াদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো দাবি নেই, কিন্তু এমন কিছু করা উচিৎ যার মাধ্যমে আমার ভাইকে মানুষ মনে রাখতে পারবে। এরইমধ্যে চৌপল্লীতে একটা রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। তবে এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে না, এলাকাবাসী ও ছাত্র-জনতা করেছে। স্থানীয়রা তার স্কুলের একটা ভবন তার নামে নামকরণ করার কথা দাবি জানিয়েছে।

Quota_Kawsar--Inner-02

আর্থিক সহায়তা ও নামকরণ

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহতদের পরিবারকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বিএনপি ২০ হাজার ও জামায়াত ১ লাখ টাকা করে শহীদদের পরিবারকে দিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের বঙ্গবন্ধু চত্বরের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আফনান চত্বর করা হয়েছে। দক্ষিণ তেমুহনী চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে মাসুদ নামে আরেক শিক্ষার্থীর নামে। সে রাজধানী ঢাকায় আন্দোলনে নিহত হয়েছে। এছাড়া শহরের ঝুমুর চত্বরকে বিজয় চত্বর হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

এমএইচ