ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ এএম
প্রথমে সরকারি চাকারিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার প্রধানের দেশ ছেড়ে পলায়ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন দেশের ছাত্র-জনতা।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাসের মাথায় এবার নতুন প্লাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৈরি প্লাটফর্ম ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। তবে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে না এই সংগঠন।
এই সংগঠনটি বলছে, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনা থাকা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে এখনো স্বৈরাচারী ধারা ও অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। এমন অবস্থায় যাত্রা শুরুর পর ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও মহানগরে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম কাজ হবে সংস্কার।
কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম, তবে এখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যাত্রা শুরু করছি না। দল হিসেবে কার্যক্রম কবে কিংবা কিভাবে হবে সেটা ভবিষ্যতের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
সে সময় নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করলেও তা সফলতার মুখও দেখেনি।
এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা এই প্লাটফর্মটি আগে সংবিধান পরিবর্তন করে রাজনৈতিক কাঠামোতে আগে পরিবর্তন আনতে চায়। এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরুর দিকে নজর দিতে চায় তারা।
যেভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ৮ আগস্ট নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছয় সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তখন এই সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, এই কমিটি সকল অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ ও আলোচনা করবে। এই কমিটি সরকারের বিভিন্ন কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ব্যাপারেও কাজ করবে।
এরপর গত একমাস ধরে ওই লিয়োজোঁ কমিটি কাজ করে এই জাতীয় নাগরিক কমিটির রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা নাসির আব্দুল্লাহকে আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির আ্বায়ক আক্তার হোসেনকে সদস্য সচিব করে কমিটি চূড়ান্ত করা হয়।
ওই লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, গত দেড় দশকে দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ কিংবা রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যারা যুক্ত ছিল তাদের নিয়েই কমিটি করা হয়েছে।
মূলত প্লাটফর্মটিতে থাকছে তরুণ ও যুব সমাজের প্রতিনিধিরা। যাদের বয়স ২৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে তারাই প্রাধান্য পেয়েছে।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সিনিয়র সিটিজেন যারা আছেন তাদেরকে অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগাতে তাদেরকে রাখা হবে উপদেষ্টা হিসেবে।
প্রাথমিক টার্গেট রাষ্ট্র সংস্কার
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠকরা বলছেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি।
প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি সারাদেশের ৬৪ জেলা ও ১২টি মহানগর এবং উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করবে। এরপর জাতীয়ভাবে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সেই কাউন্সিল নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করবে।
সংগঠক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, আওয়ামী লীগ গত পনেরো বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। সরকার পতনের পর সেই জায়গাগুলোতে এক ধরনের ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। এই কমিটি সে সব জায়গাগুলোতে সংস্কার আনতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কাজ করবে।
এই সংস্কার করতে গিয়ে সংবিধান সংশোধন কিংবা পরিবর্তনে জোর দিচ্ছে নাগরিক কমিটি।
সংগঠনটির নেতৃত্ব বলছেন, সবার আগে নতুন গঠিত কমিটি সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ তৈরি করতে জনমত গঠন ও প্রস্তুতি নিতে কাজ করবে শুরুতেই।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে সংবিধান রয়েছে আবার ফ্যাসিবাদ পুর্নজ্জীবিত করতে পারে। যে কারণে নতুন একটি সংবিধানের বিষয়ে জনগণের মধ্যে আমরা এই আলাপটা জোরালো করতে চাই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাথে কী সম্পর্ক?
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হয়।
শুরুতে সমন্বয়ক কমিটি ছিল ৬৫ জনের। পরে আগস্টের শুরুতে যখন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় তখন এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয় ১৫৮ সদস্য নিয়ে।
পাঁচই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যে সরকার গঠন হয়েছে সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও রয়েছে এই সমন্বয়কদের দুই জন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘোষণার পর কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় তাদের কার্যক্রম।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কারে যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয় গত আটই আগস্ট, সেই কমিটি জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে যাদের এখনো শিক্ষাজীবন রয়েছে, অর্থাৎ যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন তাদের সাথে কাজ করবে আগে থেকে গঠিত ছাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান মাসুদ ও আবু বাকের মজুমদারসহ অন্য সমন্বয়করা।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, দুটি সংগঠনের মধ্যে বড় কোনও পার্থক্য নেই। আমরা ছাত্র নাগরিকদের নিয়ে কাজ করব। আর নাগরিক কমিটি বাকিদের নিয়ে কাজ করবে।
আর যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে এখন যুবক বা তরুণ প্রজন্মের তাদের নিয়ে কাজ করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা সবাই গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিট ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করি। সাম্য ও বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষা থেকে দুটি প্লাটফর্ম এক। আলাদা কোন পার্থক্য নেই। সূত্র: বিবিসি বাংলা