images

জাতীয়

মাথায় গুলি, ক্ষণে ক্ষণে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন জাকির

কাজী রফিক

২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

গত ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একদিন আগে গুলিবিদ্ধ হন মো. জাকির৷ এরপর শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। বিজয় মিছিল হয়েছে সর্বত্র। সেই মিছিলে ছিলেন না ২৪ বছরের এই যুবক৷ সবাই যখন আনন্দে আত্মহারা, তখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা জাকির।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনের মাঝপথে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলান জাকির। যদিও তিনি ছাত্র না। কাজ করেন গাড়ির গ্যারেজে৷ যৌক্তিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন ছিল তার৷ তাই কাজ বন্ধ রেখেই জুড়ে যান আন্দোলনের মাঠে।

বুধবার ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপ হয় মো. জাকিরের। জানান, তার মাথায় গুলি লেগেছে দুটি। যার একটি মাথার তালুর চামড়া চিড়ে বের হয়ে গেছে। আরেকটি রয়ে গেছে মাথার ভেতরেই।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বেশ ধীর গতিতে কথা বলতে হয়েছে তাকে৷ জাকির বলেন, 'আমার কথা বলতে অনেক কষ্ট হয়৷'

আরও পড়ুন

শরীরে ২১২ গুলি, চোখ হারাতে বসেছেন হাবিব

জানান, ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সে দিনের বর্ণনাও দেন জাকির। বলেন, '৪ তারিখ বিকাল ৩টা ৪৫ এর দিকে। আমরা সবাই বাসস্ট্যান্ডে ছিলাম। তখন গুলি করছে। আমি তো বাঁচতামই না, আল্লাহ কোনো রকম বাঁচাইয়া আনছে।'

পুলিশ গুলি ছোড়ার সময় আপনি কি সামনে ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমাকে পুলিশ গুলি করে নাই তো। আমারে গুলি করছে ছাত্রলীগ।'

Jakir2

শারীরিক বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাকির বলেন, 'মাথার মধ্যে এখনো একটা গুলি আছে। ব্যথা করে৷ কোনো আওয়াজ সহ্য করতে পারি না। ঢাকা উদ্যানে আমার যেইখানে বাসা, ওইখানে গাড়ি চলে৷ আওয়াজ সহ্য হয় না। তাই টঙ্গী চলে আসছি।'

ছেলের অবস্থা নিয়ে শংকিত আব্দুস সোবহান৷ ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'ডাক্তারের কাছে অনেকবার নিছি। ঢাকায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে দেখাইছি। পোলাডা আমার একটু পর উল্টাপাল্টা কথাবার্তা হয়। হঠাৎ হঠাৎ সবাইরে ভুইলা যায়।'

আরও পড়ুন

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ সাগর, দুশ্চিন্তা পরিবার নিয়ে

জাকিরের বড় ভাই মো. নাসির। পেশায় রাজমিস্ত্রি৷ ভাইয়ের চিকিৎসা ভার বহনের সাধ্য নেই তার। আবার ভাইর অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে, তাও ঠিক ঠাক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

মো. নাসির বলেন, 'মাথার মধ্যে যে গুলিটা আছে, ওইটাই সমস্যা। ডাক্তারের কাছে ৬-৭ দিন আগে নিছিলাম। তারা কইছে, গুলি মাথার মধ্যে থাকাও ঝুঁকি, আবার বাইর করাটা ঝুঁকি৷ গুলি বাইর করতে গেলে আপনার ভাই বাঁচতেও পারে, মারাও যাইতে পারে৷ আবার এখন যেমন মাঝে মধ্যে স্মৃতি হারাইয়া যায়, সবাইরে ভুইলা যায়, তখন একবারে স্মৃতি হারাইয়া যাইতে পারে। কী করমু বুঝতাছি না। আমরা বড় ডাক্তারও দেখাইতে পারতাছি না। টাকা-পয়সা নাই। এখন যে টাকার ওষুধ লাগে, সেই টাকাও আমগো নাই।'

কারই/জেবি