images

জাতীয়

‘সরকার পরিচালনায় নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এটি কোন ধরনের সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটি সংক্ষিপ্ত সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করবে। তাছাড়া ছাত্র আন্দোলনের সময় করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। বিগত আন্দোলনে মানুষ হত্যা ও গুলিতে আহত করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের জন্য সমাজের সর্বস্তরের লোকদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ও প্রতিটি থানায় আলাদা করে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনপ্রত্যাশা ও আগামীর করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে আইন, বিচার ও সংসদ, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার অন্যতম রিটকারী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও সেশন জজ মো. মাসদার হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকসের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী।

মো. মাসদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সংবিধানের অনেক ধারা পরস্পর সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া বিপ্লবের মধ্যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি এখন ১০-১৫ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত একটি সংবিধান হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার এসে পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করবে।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তেমনি বিচার বিভাগকেও হত্যা করা হয়েছে। বিচারকরা বিবেক থেকে বিচার করতে পারছিলেন না। এসবের সমাধান হওয়া দরকার।’

বিচারক নিয়োগে নীতিমালা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন বিচারক নিয়োগে কোনো নীতিমালা নেই। রাজনৈতিক স্বার্থে নিয়োগ হয়। এক্ষেত্রে বিচারক নিয়োগে সুস্পষ্ট নীতিমালা করতে হবে।’

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব রেখে ড. ফরিদ এ সোবহানী বলেন, ‘শিক্ষার প্রতিটি পর্ব ধ্বংস করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তো আরও বেশি। ইউজিসিকে শিক্ষাবান্ধবের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এটিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষক অনুরাগী ব্যক্তিদের সেখানে নিয়োগ দিতে হবে। তা ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বিসিএস পরীক্ষা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ টেক্স তুলে নিতে হবে ও সরকারি ফান্ড দিতে হবে। এগুলোকে কোনোভাবেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।’

আরও পড়ুন

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি বিগত সরকার জুলুম অত্যাচার করেছে এবং জঙ্গি বলে অভিহিত করেছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্তদেরকেও জঙ্গি বলে অভিহিত করেছিলেন সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে জঙ্গি কাজ কোনগুলো তা রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া দরকার। কেননা এই অভিযোগ করে অসংখ্য নাগরিককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিপদে ফেলা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন আব্দুল্লাহ ইউসুফ নামের এক প্রবাসী।

মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের নেতাদের মধ্যে ফরেস্ট, এনভাইরনমেন্ট, টুরিজম, এনিম্যাল অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্চ অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি রনজিত বর্মন মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে ২১ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যস্থাকে দ্রুত বাদ দিয়ে যুগপোযোগী শিক্ষানীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মমুখি শিক্ষার ওপর আলোকপাত করেন সদস্য আরিফুল ইসলাম চঞ্চল।

পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করেন ফিন্যান্স অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম রনি। তা ছাড়া ঋণখেলাপির প্রায় এক লাখ ৮২ হাজর কোটি টাকারে উদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি কমিশনের আওতায় পরিচালনা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যাংক না দেওয়ার ওপর আলোচনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কৌশিক।

আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ১৭ দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখনো তারা কোন মন্ত্রণালয়ে কী ধরনের পরিবর্তন দরকার তা নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দিচ্ছে না ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষের কাছেও চাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কী কী সংস্কার করা দরকার সে ব্যাপারে রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজের কাছে আহ্বান জানাতে হবে। সেই আলোকে সম্মিলিতভাবে সমস্যাগুলোর সমাধানে কমিটি করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। 

এমআইকে/জেবি