images

জাতীয়

বিপদে ঊর্ধ্বতনকে কল করেও সহায়তা পায়নি পুলিশ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় যখন হামলা হচ্ছিলো তখন প্রাণ রক্ষায় দুই পুলিশ সদস্য থানা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। এরপর জীবন বাঁচাতে তারা ঢুকে পড়েন সেখানে থাকা পানির ট্যাংকের ভেতরে। সেখানে দুই ঘণ্টা ট্যাংকের ভেতরে পানির ওপর মাথা তুলে শুধু শ্বাস নিয়েছেন। সেই অবস্থাতে তারা সাহায্য চেয়ে কল করেন জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি)। কিন্তু পুলিশ সুপার তাদের কোনো সহায়তা করেননি। উল্টো তার ফোন বন্ধ করে দেন। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে সেনা সদস্যরা থানা এলাকায় গিয়ে হাজির হলে বেরিয়ে আসেন ওই দুই পুলিশ সদস্য।

এখানেই শেষ নয়, একই ঘটনায় নিহত এক পুলিশের এসআইয়ের স্ত্রী টেলিভিশনের খবর দেখে জানতে পারেন তার স্বামীর কর্মস্থলে হামলার তথ্য৷ এরপর সেই নারী জেলার এসপির কাছে কল করে জানতে চান তার স্বামী বেঁচে আছেন কিনা, তার খোঁজটি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই তথ্যটি দিতে পারেননি পুলিশ সুপার। পরে সেই নারী তার স্বামীর এক বন্ধু, যিনি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কাজ করেন তাকে কল করেন। এরপর সেই বন্ধু তাকে জানান যে, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কথা হয় জাতীয় জরুরি সেবায় কাজ করা পুলিশের এক পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি সোমবার (৫ আগস্ট) সারাদেশে হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের অসহায়ত্বের কথা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা জনগণের বন্ধু। মানুষের বিপদে নিরাপত্তা দেই। কিন্তু আমাদের বিপদে আমরা ঊর্ধ্বতনকে কল করে সহযোগিতা পাই না! এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? ঊর্ধ্বতনরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে এতগুলো প্রাণ ঝরতো না।

শুধু সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরেই নয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাও যখন লোকজন চারদিক থেকে ঘেরাও করে সেই মুহূর্তে ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা তাদের ঊর্ধ্বতনকে কল করে সহায়তা চান। কিন্তু তারাও কোনো সহায়তা তো দূরে থাক, নির্দেশনাও পাননি। ফলে একপর্যায়ে তারা জীবন বাঁচাতে এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে থানা থেকে বের হয়ে যান। সেই সময় এই পুলিশের গ্রুপে প্রায় ২২ জনের মতো সদস্য ছিল। কিন্তু সেই গুলিও তাদের বেশিরভাগ সদস্যকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি।

আরও পড়ুন

ডিএমপি কমিশনার ও র‍্যাবের ডিজিকে বদলি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, প্রথমে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে দুপুরে হামলা হয়। পরে দক্ষিণখান থানায়। তারাও ঊর্ধ্বতনের সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরেও বাঁচতে পারেননি তারা। সেখানে ১০ জনকে মেরে ফেলে রাখে বিক্ষুদ্ধ জনতা।

তারা আরও জানান, শুধুমাত্র ঢাকাতেই অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিষয়টি এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ এর সঙ্গে পুলিশের মান-সম্মান জড়িত। সবমিলিয়ে পুরো দেশের অন্তত ৪০০ থানায় হামলা হয়েছে। আর নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ এর বেশি পুলিশ সদস্য। যদিও সঠিক সংখ্যাটা কত তা এখনও জানতে পারেনি খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। তবে তারা এ নিয়ে কাজ করছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ জেলার ঊর্ধ্বতনরা ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। এমনকি তারা কোথায় আছেন, কি অবস্থায় আছেন সেটাও অবগত করছেন না সদর দফতরকে। 

সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুর অর রশিদসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে আছেন। এছাড়াও অন্যরা সীমান্তে হয়ে ভারত পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। 

আরও পড়ুন

দ্রুত থানার কার্যক্রম ও সেবা শুরু করবে পুলিশ

এদিকে, সারাদেশের থানাগুলো থেকে কমবেশি পুলিশ সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলার শিকার থানাগুলোতে এই মুহূর্তে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। ফলে সেগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে আনসার সদস্যরা। 

এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ফোকাল পয়েন্ট (সমন্বয়ক) অতিরিক্ত আইজি একেএম শহিদুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে রাজারবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ আহ্বান জানান।

সারাদেশে নিহত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক ঘটনা। তবে এর প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং যারা পুলিশের চেইন অব কমান্ড লেভেলে আছেন তাদের কাজ কর্মে কোনো প্রকার গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমআইকে/এমএইচএম