images

জাতীয়

আবেদ আলী নিজের ও স্ত্রীর নামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৯ জুলাই ২০২৪, ০৯:১০ পিএম

বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। গাড়ি চালকের চাকরি করে তিনি গড়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। নিজের নামে যত সম্পদ গড়েছেন এর চেয়ে বেশি গড়েছেন স্ত্রীর নামে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব তথ্য পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে সিআইডি।

গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে আবেদ আলীসহ সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ইতোমধ্যে গ্রেফতার ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সিআইডি জানিয়েছে, আবেদ আলী নামে-বেনামে নানা সম্পদ করেছেন। তার গ্রামে বহুতল বাড়ি রয়েছে। করেছেন বাগান বাড়িও। এছাড়াও তিনি ঢাকায় অনেক সম্পদ করেছেন। রাজধানীর পাইকপাড়ায় তার ছয় তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডে একটি ৯ তলা ভবনে রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট। তিনি যাতায়াত করতেন দামি একটি গাড়িতে।

আবেদ আলী নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে দাবি করতেন। বহু কষ্টে ঢাকায় এসে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরুর গল্পও তিনি করে বেড়াতেন। সে ব্যবসা থেকে এসব সম্পদ গড়েছেন বলেও দাবি তার।

55

আবেদ আলীর জমি বাড়ি ফ্ল্যাট গাড়ি ছাড়াও রয়েছে রিয়েল এস্টেট ও হোটেল ব্যবসা। কুয়াকাটায় তার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। যদিও তিনি বিভিন্নজনের শেয়ারে তা চালু করতে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, শেওড়াপাড়ার নয় তলা একটি ভবনে আবেদ আলীর মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট ছিল। সম্প্রতি তিনি দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। ভবনের পঞ্চম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ভবনের পঞ্চম তলায় তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং চতুর্থ তলায় একটি।

সিআইডি সূত্র বলছে, ধানমন্ডির ১৬ নম্বর রোডে আবেদ আলীর ছয় কোটি টাকা মূল্যের তিন হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে দুই কোটি টাকা মূল্যের ৩০০ বর্গফুটের দোকান, পূর্বাচলে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি ও বাগেরহাটের গোপালকাঠি গ্রামে ২০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১০ কাঠা জমি রয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আবেদ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোটা অংকের টাকা রয়েছে। এছাড়া তার একটি গাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এসব অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। এসব অর্থ দিয়ে তিনি যেমন একদিকে বিলাসী জীবনযাপন করতেন, তেমনি সামাজিক কাজেও এসব অর্থ ব্যয় করতেন। জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টাও করেছেন।

66

আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে 'সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার' পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

বেশিরভাগ সম্পদ স্ত্রীর নামে!

আবেদ আলী বেশ ধুরন্ধর প্রকৃতির। তিনি যে সম্পদ গড়ে তুলেছে তার বেশিরভাগই স্ত্রীর নামে করেছেন। তিনি স্ত্রীর সম্পদের তথ্যও দিয়েছেন সিআইডিকে।

তার তথ্যমতে সিআইডি জানিয়েছে, আবেদ আলীর স্ত্রীর নামে ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে চার কোটি টাকা মূল্যের দুই হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের চার হাজার ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটির বি ব্লকে ১০ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল বাড়ি, মানিকগঞ্জের রাখোরা মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ বিঘা জমি, ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুল মৌজায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ বিঘা জমি, রাজধানীর পান্থপথে চার কোটি টাকা মূল্যের ৪০০ বর্গফুটের দোকান, রাজধানীর ৫৩, বায়তুল মোকাররমে ১০ কোটি টাকার ৩০০ বর্গফুটের দোকান, কক্সবাজারের টেকনাফে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ তিন বিঘা জমি, কক্সবাজার ইনানী সমুদ্র সৈকতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাপনাসহ ১ বিঘা জমি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ কাঠা জমি রয়েছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার দেওয়া এসব তথ্য তারা যাচাই বাছাই করছেন। মিথ্যা তথ্য দিলে সেটাও বেরিয়ে আসবে।

এমআইকে/জেবি