নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুকে গর্বের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুকে টাকায় বিচার না করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এই একটি সিদ্ধান্তের কারণে এদেশের মানুষ এখন বুক উঁচু করে চলতে পারে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এই প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা সিদ্ধান্ত (নিজের টাকায় পদ্মা সেতু) বাংলাদেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন বুক উঁচু করে চলতে পারে। এই সেতু গর্বের। সুতরাং এটাকে টাকায় বিচার করার নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বাধা উপেক্ষা করে এই সেতু করেছি। দেশের টাকায় করেছি। এজন্য যারা জমি দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাতেই এই সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনককে হত্যার পর জাতিকে মর্যাদাহীন করে দেওয়া হয়েছিল। খবরদারিটা আমাদের ওপর বেশি হচ্ছিল। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক কঠিন ছিল এই জায়গায় পদ্মা সেতু করা। যেটা কঠিন সেটাই তো করতে হবে। সহজটা কেন করবো। সব বাধা উপেক্ষা করে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পারায় তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করেন। তিনি এই সেতু প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
দেশের মানুষের টাকায় অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে জানিয়ে তিনি, নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা আমাদের দুই পাড়ের মানুষ যারা তাদের নিজেদের জমি দান করেছেন এবং যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাদের অন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সাধারণত কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেটার অনুষ্ঠান কখনও করা হয় না। তবে, পদ্মা সেতু অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে, অনেক বাধা অতিক্রম করে নির্মাণ করতে হয়েছে, যেটা করেছি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের জনগণের টাকায়। দেশের মানুষের টাকায় এই সেতুটি নির্মাণ। রেল সেতুটাও একইসঙ্গে হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চেয়েছিলাম, নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা আমাদের দুই পাড়ের মানুষ যারা তাদের নিজেদের জমি দান করেছেন এবং যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাদের একটু অন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে। সেজন্যই আজকের এই আয়োজন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠানই এটা।
ড. ইউনূসের কড়া সমালোচনা
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের ইন্ধনে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল জানিয়ে তার কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা ব্যাংকের এমডি পদ। এই পদটা নিয়েই যত সমস্যা। নামি দামি একেবারে নোবেল লরিয়েট, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য লালায়িত কেন। এই প্রশ্নের উত্তর তো পেলাম না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হুমকি দেওয়া হলো এমডির পদ না থাকলে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাবে। হিলারি ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি এলো। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, এই এমডি পদে কী মধু আছে। শেখ হাসিনা বলেন, কী যে মধু আছে, এখন বুঝতে পারবেন। যখন লেবাররা মামলা করে তখন বোঝা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনূস কেন এমডি পদে থাকতে পারল না এর জন্য হিলারির নির্দেশে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করল। একে একে অনেকে বন্ধ করে দেয়। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বরেছি। তারা বলেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক না থাকলে পদ্মা সেতু করা যাবে না। আমি বললাম, কেন পারবো না। একমাত্র মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি করে দেব। আমাদের দেশের কেউই পাশে ছিল না। একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ ছিল। জ্ঞানীগুণী সবাই বলেছিল, পারবে না। টাকা কোথায় থেকে আসবে। আমি বলেছিলাম, নিজের টাকায় করব।
সরকারপ্রধান বলেন, বলল দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি বললাম, প্রমাণ দেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেন। আমরা প্রমাণ চাইলাম। বলল, প্রমাণ আছে। কিন্তু দিতে পারল না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতু থিম সং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।
জেবি