কাজী রফিক
২৭ জুন ২০২৪, ১২:৪৮ এএম
# উচ্ছেদকে তোয়াক্কা করেন না সাদিক এগ্রোর মালিক
# সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় খামার
# দখলের পেছনে যুক্তিও আছে সাদিক এগ্রোর মালিকের
দেশের আলোচিত-সমালোচিত এগ্রো প্রতিষ্ঠান সাদিক এগ্রো। বড় গরু, দামি গবাদী পশু বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানটি আলোচনায় উঠে এসেছে বারবার৷ চলতি বছর সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে সাদিক এগ্রো। শুধু সমালোচনা নয়, সাদিক এগ্রোর ব্যবসায়ও রয়েছে নানা অবৈধ কার্যকলাপ। উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ গবাদী পশু বিক্রিই শুধু নয়, প্রতিষ্ঠানটির খামারও গড়া হয়েছে অবৈধভাবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোট চারটি। এরমধ্যে খামার তিনটি, ডেইরি পণ্য বিক্রির দোকান একটি৷ পুরো এলাকা জুড়ে দখল নির্ভর সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে সাদিক এগ্রো।
এর মধ্যে সাত মসজিদ হাউজিং এলাকার এক নং সড়কের পশ্চিম দিকে সাদিক এগ্রোর সবচেয়ে বড় খামার৷ খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে আরও বহু বছর আগে৷ সে সময় খালের জায়গা দখল করেই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়৷ দখলকৃত খালের নাম রামচন্দ্রপুর খাল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাদিক এগ্রো এই জায়গায় খামার নির্মাণ করার আগে খালে পানির প্রবাহ ছিলো৷একমাত্র এই খামারের জন্য খালটি ভরাট করা হয়।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাদিক এগ্রোর খামার গুড়িয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। অভিযানের নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব কবির বিন আনোয়ার।
তবে সে উচ্ছেদের পর এক বছরও দখলমুক্ত ছিলো না জায়গাটি। খাল দখল করে পুনরায় নির্মাণ করা হয় টিনশেড৷ মেঝে করা হয় ঢালাই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন আশপাশের মানুষকে একেবারেই তোয়াক্কা করেন না। পাশাপাশি সরকারি সংস্থার উচ্ছেদকেও তোয়াক্কা করেন না তিনি। সম্পদ ও বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ-সম্পর্ক থাকার খাতিরে সরকারি খালকে নিজের জায়গা ও খামারের অবর্জনা ফেলার কাজে ব্যবহার করে আসছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন সাদিক এগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন।
ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, এখানে কোনো দখল করা হয়নি। ঈদে কোরবানির পশু কিনতে অনেকে আসবেন, তাদের জন্য অস্থায়ীভাবে বাঁশ দিয়ে ছোট স্থাপনা করা হয়েছে৷আপনি আশপাশে দেখেন, অনেক দখল আছে।
শুধু সাত মসজিদ হাউজিং নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়া হয়েছে নবীনগর ৭ নং সড়কে। বেড়িবাঁধ সড়ক ধরে নবীনগর হাউজিং এলাকার ৭ নং সড়কে প্রবেশ করতেই হাতের ডান দিকে বিশাল স্থাপনা সাদিক এগ্রোর৷
সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশে সাদিক এগ্রোর মূল খামার৷ তার ঠিক সামনে সরকারি জায়গার পুরোটাই দখল করে আছেন ইমরান হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, শুরুতে ছোট আকারে একটি খামার করেছিল সাদিক এগ্রো৷ পরে সেটিকে দিনে দিনে বড় করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় থাকলেও পরে বাড়িয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিপুল পরিমাণ জায়গায় ছাউনি তৈরি করা হয়। লোহার বেড়া দিয়ে তৈরি ছাউনিতে রাখা হয় গরু, ছাগল, দুম্বা ও উট।
একই খামারে বর্তমানে দুগ্ধ এবং বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়৷যার দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বেশ বাইরে৷
অভিযোগ রয়েছে, সাদিক এগ্রো তাদের খামারের সামনের সড়কে গবাদী পশু ও খাবার বহনকারী গাড়ি রাখে। এমনকি সাদিক এগ্রোর ক্রেতারাও দামিদামি গাড়ি এনে রাখেন রাস্তায়। যার ফলে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে নবীনগর ৭ নং সড়কের মুখে। মাঝেমধ্যে এই যানজট দখল করে নেয় বেড়িবাঁধ সড়কের কয়েক কিলোমিটার।
তবে সাদিক এগ্রোর ক্ষমতার মুখে স্থানীয়রা কিছুই বলার সাহস পান না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে সাদিক এগ্রোর মালিক ঢাকা মেইলকে ভিন্ন যুক্তি দেখান। তিনি বলেন, আমার খামারের সামনে কিছু সরকারি জায়গা আছে৷ সেখানে কিশোর গ্যাং আড্ডা দিতো, নেশা করত। আমি ছাউনিটা দেওয়ার কারণে তারা এটা করতে পারছে না। আমার আশপাশের অন্যান্য স্থাপনা দেখেন, তারাও একই কাজ করেছে।
একইভাবে নবীনগর হাউজিং এলাকার ১৬ নম্বর সড়কের খামারটিও গড়ে তোলা হয়েছে খালের জায়গা দখল করে৷
কারই/এমএইচএম