images

জাতীয়

ঈদে গোরস্থানই বিনোদন কেন্দ্র‍!

কাজী রফিক

১৭ জুন ২০২৪, ০৯:৪৮ পিএম

# গোরস্থানের এমন চিত্র নিয়মিত
# নিরাপত্তাকর্মী সংকট
# ছুটির দিন পেলেই অন্তত ২০ হাজার দম্পতির ঢল নামে
# জনপ্রতিনিধি বললেন, নৈতিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব

জিয়ারত এবং হৃদয় নিংড়ানো আবেগ প্রকাশের জায়গা গোরস্থান। তবে সেই জায়গাকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপ দিয়েছেন এক শ্রেণীর মানুষ। ফলে আবেগের জায়গায় যেন নেমে এসেছে ঈদের আনন্দ। 

সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর রায়ের বাজার গোরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, ঝাঁকে ঝাঁকে বিনোদনপ্রেমী মানুষ। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের ঢল যেন গোরস্থানটিকে নানন্দিক বিনোদনকেন্দ্রে রূপ দিয়েছে। 

এদিন বিকালে গোরস্থানটিতে নিজের নানুর করব জিয়ারতে যান মো. আল আমিন ভূঁইয়া। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অশালীন চলাফেরা বা ঘোরাফেরার জায়গা তো এটা না। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, এটা তাদের গোরস্থান। পবিত্র একটা জায়গা। সেই জায়গায় কিছু মানুষের কাজ-কর্ম দেখলে খুবই কষ্ট হয়।’

park4

আল আমিন যখন নিজের নানুর কবর জিয়ারত করছিলেন তখনই পাশে দেখা গেল হাত ধরাধরি করে চলাচল করছে এক দম্পতি।

গোরস্থানের ৬ নম্বর ব্লকের পাশের সেতুর উপর যেন বিনোদন প্রেমীদের আড্ডাখানা। ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ, টিকটক, আড্ডা, হাসিতামাশায় মেতেছিলেন গোরস্থানে আসা দর্শনার্থীরা। 

মো. শিহাব নামে একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শিহাব বলেন, ‘আমাদের আশেপাশে তো আর ঘোরার জায়গা নেই। তাই এইখানে আসি। আমরা মাঝেমধ্যেই আসি।’

অপর একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘আসছি কি হইছে? সবাই তো আসে। তাদেরকে বলেন।’

এদিকে, গোরস্থানে দর্শনার্থীর পাশাপাশি দেখা গেলো একজন হকারকে। বিক্রি করছেন আইসক্রিম। গোরস্থানের মূল ফটক দিয়েই প্রবেশ করেছেন তিনি। গোরস্থানে হকার প্রবেশ করার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি কীভাবে প্রবেশ করলেন জানতে চাইলে ওই হকার বলেন, ‘সিকিউরিটির (আনসার) সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে ঢুকা যায়।’

park3

সিকিউরিটিদের টাকা দিতে হয় কি—না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, টাকা দেওয়া লাগে না।’

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রায়ের বাজার বধ্যভূমি ও গোরস্থানের মাঝে একটি লোহার প্রাচীর রয়েছে। বধ্যভূমি অংশ থেকে কে বা কারা এই প্রাচীরের লোহা প্রায়ই ভেঙে নিয়ে যান। ফলে সেই ভাঙা প্রাচীর টপকে বধ্যভূমিতে প্রবেশকারী দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই গোরস্থানে প্রবেশ করেন। এছাড়া গোরস্থানের মূল ফটক দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করেন স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা প্রবেশে বাধা দিলে তাদের ওপর চড়াও হয় স্থানীয় কিশোর গ্যাং। আনসারদের ওপর হামলার ঘটনাও আছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রবেশে বাধা দিতেও অনেকটা নারাজ আনসার সদস্যরা। নিরাপত্তাবাহিনীর ঢিলেমির কারণে ছুটির দিন আসলেই গোরস্থান পরিণত হয় বিনোদন কেন্দ্রে!

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। ৩৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এই পরিবেশ ঠিক রাখা যায় না। বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবার এটা ডেটিং স্পটে পরিণত হয়। মানুষের লজ্জা-শরম কমে গেছে।’

park2

এই কাউন্সিলর বলেন, ‘কিছু করতে পারি না। কারণ, মানুষ ঢুকে ১০ থেকে ১৫ হাজার। কিন্তু তিন শিফট মিলিয়ে আমার আনসার হচ্ছে ১৫ জন। প্রতি শিফটে ৩ জন। দুইজন গেটে, একজন ভেতরে। আনসার যতবার বাধা দিছে, আনসারকে ধরে পিটানি দিছে।’

এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীর দেয়ালগুলো ভাঙা থাকার কারণে গোরস্থানের গেটে না গিয়ে তারা সেখান থেকে প্রবেশ করে। বুদ্ধিজীবীতে বেড়াতে গিয়ে তারপরে সেখান থেকে কবরস্থানের মধ্যে নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে প্রেম করে।’

বিষয়টি সমাধানের জন্য ব্যক্তিগতভাবেও চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন এই কাউন্সিলর। বলেন, ‘আমি অনেকবার কানে ধরিয়ে উঠবস করিয়েছি। লজ্জা-শরম নাই। পারিবারিক শিক্ষা নাই, নৈতিক শিক্ষার অভাব। আমাদের বোধ হয় ধর্মী-পারিবারিক শিক্ষাটা দেওয়া উচিত। আমরা শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে করবস্থানে প্রেম করতে যাই!’

কারই/এমএইচটি