images

জাতীয়

ভুয়া নিয়োগপত্রে চাকরির নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ২

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৭ মে ২০২২, ০৬:০৮ পিএম

প্রথমেই সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন পদের জন্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তারপর সখ্যতা গড়ে তোলা হতো চাকরি প্রত্যাশীসহ তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পদ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। এরপর নানা কৌশলে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা।

গতকাল সোমবার রাতে (১৬ মে) চাকরির নামে প্রতারণায় জড়িত এমন এক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। রাজধানীর দারুস সালাম থানার আনন্দনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলো- মো. মোশারফ হোসেন ও মো. জিয়া উদ্দিন। অভিযানে তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোন, সাতটি সিম কার্ড, বিভিন্ন চাকরির ভুয়া প্রশ্নপত্র ও ভুয়া প্রবেশপত্র ছাড়াও ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ মে রাতে ভুক্তভোগী একজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবির সাইবারের অর্গানাইজড্‌ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। একপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় পরদিন ১৬ মে রাতে দারুস সালামের আনন্দনগর এলাকা থেকে মোশারফ ও জিয়া নামে ওই দুই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন দফতরের বিভিন্ন পদের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো নিজেদের সংগ্রহে রাখতো। পরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে নিজেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিতো।

এরপর প্রথমে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে জীবন বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্যান্য সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করা হতো। পরে ওইসব তথ্যের মাধ্যমে একটি ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রার্থীর ই-মেইলে পাঠানো হতো। তারপর বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছে বলে ভুক্তভোগীকে জানানো হতো।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছে বলে জানানোর কিছুদিন পরে ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ডের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের অপর এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুনরায় চাকরি প্রার্থীকে কল দিতো। এরপর মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ কিছু টাকা বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে দিতে বলতো। পরে ওই টাকা পাওয়ার পর প্রতারক চক্রটি একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করতো। সেই সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকরি প্রত্যাশীদের কিউআর কোড জেনারেটর সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম-ঠিকানা সম্বলিত একটি কিউআর কোড তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করতো।

কৌশলে ভুয়া এই নিয়োগপত্র তৈরি হলে প্রার্থীকে কিউআর কোড স্ক্যানার দিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়োগপত্রটি সঠিক কি-না যাচাই করতে বলা হতো। এরপর প্রার্থী যখন নিজের মুঠোফোনের কিউআর কোড স্ক্যানার দিয়ে চেক করতেন তখন সেখানে তার তথ্য দেখতে পেতেন এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু প্রাপ্ত নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দফতরে গেলে পরবর্তীকালে জানতে পারতেন যে নিয়োগপত্রটি ভুয়া। আর এই সময়ের মধ্যেই চক্রটি তাদের ব্যবহৃত ফোন নম্বরগুলো বন্ধ করে ফেলতো।

চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণায় অর্থ আত্মসাৎকারী এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতারদের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এমআইকে/আইএইচ