images

জাতীয়

কে হচ্ছেন পরবর্তী পুলিশ প্রধান?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

৩১ মে ২০২৪, ১০:৪৯ এএম

আর মাত্র দেড় মাস পরেই বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিয়োগ পাবেন। কিন্তু সেই পদে কে বসবেন, কে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে এখন থেকে চলছে গুঞ্জন। কারণ আগামী ১১ জুলাই চাকরির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের মেয়াদ। তাকে সরকার দেড় বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছিল। এখনো তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তার মেয়াদ শেষ হবে ১২ জুলাই। ফলে তার চলে যাওয়ার আগের দিন পরবর্তী পুলিশ প্রধান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে হবে। এবার আইজিপি কে হবেন, প্রায় দেড় লাখের পুলিশ বাহিনীতে কে নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা চলছে।

বর্তমান আইজিপির মেয়াদ গত বছরের ১২ জানুয়ারিতে শেষ হয়েছিল। কিন্তু পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় চুক্তির মাধ্যমে। এরপর তাকে দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। তাকে এমন চুক্তিতে নিয়োগের ঘটনা পুলিশে বিরল। তবে তাকে ওই সময় নানা কারণে সরকার নিয়োগ দেয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে তাকে আবারও চুক্তিতে নিয়োগের এবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ইতোমধ্যে তার স্থলে বসার জন্য আরও তিনজন অপেক্ষায় আছেন। তারাও যোগ্যতায় কম নয়। 

তবে আইজিপি হতে হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে থাকতে হয়। আর এমন প্রতি বছর সাতজন থাকেন। যাদের মধ্য থেকে মেধা, প্রজ্ঞা ও কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে আইজিপি করা হয়। তবে সাতজনের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিভিন্ন বাহিনী বা বিভাগের প্রধান হয়ে যান। ফলে এই লড়াই হয় মাত্র তিন থেকে চার জনের মধ্যে।

এবার শোনা যাচ্ছে তিনজনের নাম। তবে প্রথমেই শোনা যাচ্ছে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসানের কথা। তিনি নাকি সবার থেকে দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তিনি পুলিশের প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত কামরুল আহসানের নামই সবার থেকে এগিয়ে আছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরপর শোনা যাচ্ছেন এসবির প্রধান মনিরুল ইসলাম ও এটিইউ প্রধান রুহুল আমিনের কথা। মনিরুল ও রুহুলও অতিরিক্ত আইজিপি। এই তিনজনের নাম গতবারও শোনা গেছে। তবে এবার মামুনের মেয়াদ আর বাড়ছে না। ফলে তাদের মধ্য থেকেই একজন হবেন আইজিপি। 

কামরুল আহসান

তিনি এর আগে তিনি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান ছিলেন। ২০২০ সালের ৩ মে তিনি পুলিশের এই সংস্থার প্রধান হন। সেসময় কামরুল আহসানের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়।

এছাড়াও তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় তিনি সুনামও কুড়ান। কাজের প্রতি তার ত্যাগ দুইবার পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (সেবা) এনে দিয়েছে। এছাড়া দু’বার আইজি ব্যাজও অর্জন করেন কামরুল।

জানা গেছে, কামরুল আহসানের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর গ্রামে। তিনি সেখানে ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় স্কুল ও কলেজে পাশ করে পরে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

কামরুল ১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে পুলিশে যোগ দেন। পরে প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলায় পরে পদায়িত হওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেল এএসপি, এএসপি ডিএসবি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, ফেনী জেলার অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামরুল আহসান।

এছাড়া কামরুল পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি ট্রেনিং এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনেও দায়িত্ব পালন করেন।

এসবির প্রধান মনিরুল ইসলাম

মনিরুলের নামও শোনা যাচ্ছে। কারণ তাকে পুলিশে সকলে চৌকষ ও মেধাবী অফিসার হিসেবে চিনে থাকে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাহাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে তিনি কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে গজিয়ে ওঠা জঙ্গিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন।

মনিরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে মনিরুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন ছাড়াও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সও করেছেন। মেধাবী ও কর্মঠ হিসেবে তার পুলিশে বেশ সুনামও আছে।

১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। 

এটিইউ প্রধান এস এম রুহুল আমিন

তিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, অর্থ ও উন্নয়ন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিকস এবং সম্পদ অধিগ্রহণে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। একত্রিশ বছরের কর্মজীবন তার। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি থেকে ডিআইজি পর্যন্ত বিভিন্ন পদে বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন।

রুহুল আমিন এএসপি এবং অ্যাড. এসপি হিসেবে বিভিন্ন জেলা, ডিএমপি, এপিবিএন, পুলিশ স্টাফ কলেজ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে রাজবাড়ী, ঝালকাঠি ও সিলেটে এবং সিএমপির ডেপুটি কমিশনার হিসেবে তিনটি জেলা কমান্ড করেন। তার চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ও রেলওয়ে পুলিশ, ঢাকা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এবং ডিআইজি (মানবসম্পদ) হিসেবে পুলিশ সদর দফতরে কাজ করেন। 

রুহুল আমিনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বিএসএস সম্মান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ১৯৯১ সালে এএসপি হিসাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। কাজে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি অবদান রেখেছেন। তিনি অ্যাঙ্গোলায় ইউএন পিসকিপিং মিশনে, রোটেশন অফিসার এবং কসোভোতে রোটেশনের ডেপুটি চিফ (টঘগওক), টিম লিডার এবং চীফ, দক্ষিণ সুদানে লিয়াজন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন। আইভরি কোটে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টও ছিলেন। তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মিশনে জাতিসংঘ পদক লাভ করেন।

পরবর্তী পুলিশ প্রধান কে হচ্ছেন— বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা কেউ কথা বলতে চান না। এদিকে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের একজন জানান, এই তিনজনের মধ্য থেকেই একজন আইজি হতে যাচ্ছেন। তবে কামরুল আহসানের নামই তারা বেশ শুনছেন। 

এমআইকে/এএস