images

জাতীয়

ফ্ল্যাটে ঢোকার ২০ মিনিটের মধ্যে খুন, কী আছে সিসিটিভি ফুটেজে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মে ২০২৪, ০১:৪১ পিএম

ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সময় যত যাচ্ছে ততই যেন সামনে আসছে ‘গা হিম’ করা সব তথ্য। জানা গেল, নারী দিয়ে ‘হ্যানি ট্র্যাপ’ তৈরি করে আনারকে নেওয়া হয় ভারতের কলকাতায়। এরপর নেওয়া হয় সরকারি কর্মকর্তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। সেখানে ঢোকার ২০ মিনিটের মধ্যে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাকে। টুকরো টুকরো করা হয় মরদেহ। এরপর ট্রলি ব্যাগ ভরে ফেলে আসা হয় অজ্ঞাত সব জায়গায়। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কমপক্ষে এক মাস আগে শুরু হয় হত্যা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। এতে জড়িত অন্তত তিনজন ঘটনার ১৩ দিন আগে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যান। তারও আগে যান দুজন। আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে নিউটাউনের ফ্ল্যাটটি ভাড়া করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন— আনার হত্যায় সুপারি কিলারকে ব্যবহার করা হয়েছিল। তার জন্য দেওয়া হয় পাঁচ কোটি টাকা। যদিও পুলিশ এখনও এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি। ভারত-বাংলাদের যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন
এমপি আনারের খুনের ঘটনা তদন্তে ঢাকায় আসছে ভারতের পুলিশ

ফ্ল্যাটে ঢোকার ২০ মিনিটের মধ্যে খুন?
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বলছে— আনার গত ১৩ মে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে ঢোকেন। এর ২০ মিনিটের মধ্যেই তাকে খুন করা হয়। প্রথমেই আনারের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মরদেহের পচন ঠেকাতে মরদেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে রাখা হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদেশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই চিত্র তৈরি করা হয়। পুলিশের ধারণা— আনোয়ারুলের দেহাংশ ট্রলি ব্যাগে করে ফ্ল্যাটের বাইরে আনা হয়। তারপর অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে মরদেহের টুকরোগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেন, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে এমপিকে। তদন্ত থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বসেই এই খুনের পরিকল্পনা হয়। 

তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করেছেন— হত্যার পর মরদেহের খণ্ডাংশগুলো লোপাটে স্থানীয় কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। খুনের পর ফ্ল্যাটটি ধুয়ে দেওয়া হয় ভালো করে। তব সূত্র বলছে, তা সত্ত্বেও ফ্ল্যাটের মধ্যে থেকে পুলিশ রক্তদাগ পেয়েছে।

আরও পড়ুন
এমপি আনার হত্যার মূল সন্দেহভাজন গ্রেফতার

তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ, কী আছে তাতে?
পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, লাল রঙের একটি গাড়ি এসে নিউটাউনের ওই আবাসনে দাঁড়ায়। সেই গাড়ি থেকে তিনজন নেমে আসে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এমপি আনোয়ারুল আজিম। পরে সেখান থেকে দুজনকে বের হতে দেখা যায়। 

ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই গাড়িটিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। গাড়ির মালিক ও তার চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

স্বর্ণ চোরাচালানের দ্বন্দ্বে খুন
তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তর্দেশীয় চক্রের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ারুলকে ভারতে এনে খুন করা হয়েছে। এর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন নামের এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এমপি আনোয়ারুল ভারতে গিয়ে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাসও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। এমপির বিরুদ্ধেও চোরাচালানসহ অন্তত ২১টি মামলা ছিল। যদিও পরে সেসব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিশও জারি করেছিল। অবশ্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সেটা তুলে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
এমপি আনারকে ভারতে নিতে ‘শিলাস্তিকে হানি ট্র্যাপ’, কে তিনি?

বিভ্রান্ত করার চেষ্টা
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে— আনোয়ারুলকে খুনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বজনদের বিভ্রান্ত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন খুনিরা। তারা আনোয়ারুলের মোবাইল নম্বর থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিতে থাকেন। এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থানও পরিবর্তন করতে থাকেন। এ কারণেই নিখোঁজের ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা দুই দফায় তার মোবাইল নম্বর ভারতের দুটি রাজ্যে সচল হওয়ার তথ্য পেয়েছে।

আনোয়ারুল ১৩ মে রাতে খুন হন। অথচ সেই রাতে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই।

১৫ মে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’ আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়। ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই হত্যার ঘটনা সম্পর্কে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, কালীগঞ্জের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের হত্যাকাণ্ডটি পারিবারিক, আর্থিক নাকি অন্য কোনো কারণে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ডিবি নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে।

এইউ