images

জাতীয়

যেভাবে হত্যা করা হয় এমপি আনারকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মে ২০২৪, ১২:০২ পিএম

চিকিৎসার উদ্দেশে ভারতে গিয়েছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। দেশটিতে গিয়ে প্রথমে ছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এক বন্ধুর কাছে। এরপর তার বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ ছিলেন প্রায় ৮ দিন। গতকাল দেশটির পুলিশ জানিয়েছে নিউটাউনে খুন হয়েছেন তিনি। এরপর থেকে ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। 

বিভিন্ন সূত্রে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে— গত ১৩ মে নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে খুন করা হয় আনারকে। ওই দিন আনারের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে। এরপর মরদেহটিকে টুকরো টুকরো করা হয়। তিনদিনে ধীরে ধীরে ফ্ল্যাট থেকে অল্প অল্প করে সরানো মরদেহের টুকরোগুলো। তবে এ দায়িত্ব যাদের ছিল তাদের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সূত্রমতে— তারাই জানে বডি কোথায় ফেলেছে। ওই ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ বেশ কিছু প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করেছে। 

গত ১৩ মে যে তিনজনের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন আনার, তাদের মধ্যে দুজনকে ১৪ মে সকালে একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা যায়। ওই দিন বিকেলের দিকে বেরিয়ে যান আরও একজন, সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সেই ছবি। কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গেলেও আনারকে বের হতে দেখা যায়নি। পারিপার্শ্বিক এ তথ্যপ্রমাণ থেকেই পুলিশ খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে।
 
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে— ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ২২ মে তাকে খুন করার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন
এমপি আনার হত্যায় সন্দেহভাজন কে এই আখতারুজ্জামান?

এদিকে এমপি আনার খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তাদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে— এমপি আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশিরাই জড়িত। 

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির প্রধান জানিয়েছেন, পূর্ব কলকাতার নিউটাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরের কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার রায়ের। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান। তিনিই ওই ফ্ল্যাটে আনারের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কি না— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরে বলেন, আনারকে কলকাতার ওই বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে এবং যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের বলে তারা জানতে পেরেছেন।

বিকেলে নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ঘুরে দেখে কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যা তথ্য আছে; তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কিনা সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।

লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমাদের কাছে ইনপুট আছে। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

এইউ