নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। ইতোমধ্যে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। উচ্চবিত্তদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাটলেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র গরমে ঠিক মতো কাজ না করতে পারায় আয় কমেছে শ্রমজীবীদের।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমেও যার যার পেশায় ছুটে চলছে মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘ সময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমে কষ্ট কয়েক গুণ বাড়লেও কমেছে আয়।
আরও পড়ুন
সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে রিকশা চালকদের। গরমে পুরো দিন রিকশার প্যাডেল টানতে পারেন না। অর্ধবেলা গাড়ি টেনে আয় করেন ৩০০/৪০০ টাকা। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার রিকশাচালক মাইদুল বলেন, ‘যে গরম, গরমে রিকশা চালাইতে খুব কষ্ট হয়। একটানা চালাইতে পারি না, শরীর দুর্বল হইয়া যায়। বিশ্রাম নেওন লাগে। গরমে বেশি চালাইতে পারি না বইলা কামাই রোজগারটাও কমে গেছে। আগে হয়তো সকাল থেকে আগে সকাল থেইকা দুপুর পর্যন্ত ৪০০-৫০০ টেকা কামাই হইত। অহন ৩০০ কামাইতে জান বাইর হইয়া যায়।’
একই এলাকার আরেক রিকশা চালক বলেন, ‘গরমে মানুষ ঘর থেইকা বাইর হয় না। আমরাও ঠিকমত রিকশা টানতে পারি না। এতে ঠিকমত আয় হয় না।’
রিকশাচালক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘গরমে গাড়ি টানা যায় না মামা। বার বার পানি খাই। পানি শরীরে থাকে না। বের হয়ে যায়। কী করমু। তারপরও গাড়ি চালাই। পেটে ভাত দিতে অইবো তো।’
শাহবাগ এলাকার আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘এই গরমে রিকশা নিয়া রাস্তায় বের হওয়াই ভয়ের। বেশি দূরের ভাড়ায় যাই না। আধা ঘণ্টা রিকশা চালাই, আর আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নেই। আবার অতিরিক্ত গরমের কারণে লোকজনও কম বের হচ্ছে। ফলে ভাড়াও বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’ এতে তার আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে তিনি জানান। ফলে ঈদের আগে কষ্ট বেশি হলেও আয় না থাকায় চলতে কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে তীব্র তাপদায়ে যাত্রী কমেছে গণপরিবহনেও। রাজধানীতে বিমানবন্দর-যাত্রাবাড়ী রুটের বাসচালক আনিসুল জানালেন, বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী সংখ্যা হাতেগোনা। সকালের দিকে কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। সন্ধ্যার পরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দিনের বেলা যাত্রীদের দেখা মিলছে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই গরমে মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না, যার প্রভাব পড়ছে গণপরিবহনেও।
এছাড়াও তীব্র গরমে তেমন বেচাবিক্রি নেই ফুটপাতের দোকানগুলোতে। রাজধানীর গুলিস্তানে পোশাক ফুটপাতে পোশাক বিক্রেতা হারুন বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের মতো বিক্রি হয় না। কাস্টমার নাই বললেই চলে। শেষ বিকালে কাস্টমার কিছুটা বাড়ে। তখন রোদ একটু কম থাকে। আবার অনেক অফিসে ছুটি হয় বিকালে, তখন বেচাকেনা কিছুটা বাড়ে।’
রোদ বেশি থাকায় ফুটপাতে চৌকির উপর ছাতা লাগিয়েছেন দোকানিরা। এক দোকানদার বলেন, ‘আমার আগে ছাতা ছিল না। এখন রোদের কারণে ছাতা লাগিয়েছি। এতে আমি একটু ছায়া পাই, কাস্টমারও যেন এসে দাঁড়াতে পারেন। এখন ছাতার নিচে বসে আছি, কোনো কাস্টমার নেই।’
এদিকে তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে আবহাওয়া অধিদফতরের জারি করা ‘হিট অ্যালার্ট’ বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার সময় আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে অধিদফতর আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য নতুন সতর্কবার্তা দিয়েছে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া বিভাগ। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার (২৭ এপ্রিল)। রোববার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
টিএই/জেবি