images

জাতীয়

শেষ বেলায় যাত্রী চাপ, লঞ্চ মালিকদের মুখে মৃদু হাসি!

বোরহান উদ্দিন

০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩২ এএম

• গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় চাপ বেড়েছে
• ছাদেও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন যাত্রীরা
• যাত্রী নিয়ে একদিনে সদরঘাট ছেড়েছে ১১১ লঞ্চ

এক পদ্মা সেতু বদলে দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকা শহরে আসা-যাওয়ার গতিপথ। বছরের পর বছর ধরে নৌপথে লঞ্চে চলাচল করা মানুষ সময় বাঁচাতে বরিশাল তথা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সড়ক পথে বেশি চলাচল করছেন। তাই যাত্রী সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াতে অনেক রুটে নিয়মিত চলা লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দুই ঈদে যাত্রী পাওয়ার আশায় প্রহর গুনলেও লঞ্চ মালিকদের সে আশা পূরণ হয় না গত কয়েকবছর ধরে। এবার ঈদুল ফিতরেও তেমনটা ঘটেছে।

কারণ অতীতে ঈদের অন্তত সপ্তাহখানেক আগে থেকে যাত্রীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ত। তবে গত কয়েক ঈদের মতো এবার রোববার পর্যন্ত অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল সদরঘাটের চিত্র। যদিও সোমবার পোশাক শ্রমিকদের ছুটি হওয়ার কারণে যাত্রী চাপ ছিল পুরানো দিনের মতো। এতে ব্যবসা মন্দার মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নৌ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাঝে। মঙ্গলবারও যাত্রী চাপ থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, সোমবার গার্মেন্টস ছুটি হলেও গাজীপুর-টঙ্গী, সাভারের অনেকে যারা লঞ্চে যেতে চান তারা সবাই আসতে পারেননি। কারণ সোমবার ঢাকার গুলিস্তান, সায়দাবাদসহ বেশ কিছু পয়েন্টে ভয়াবহ যানজট ছিল। ফলে অনেকে দূর থেকে আসেননি। তারা মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বেন। ফলে যাত্রী চাপ থাকবে।

2

সোমবার ঢাকা ছেড়েছেন এমন একাধিক লঞ্চের যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেক পরিপূর্ণ হয়ে যাত্রীদের কেবিনের আশপাশেও বসে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। ধারন ক্ষমতার অনেক বেশি যাত্রী নিয়ে বেশিরভাগ লঞ্চ সদরঘাট ছাড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভোলার উদ্দেশে ঢাকা থেকে এমভি তাসরিফ লঞ্চে যাওয়া নূরে আলম জিকো রাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মেইলকে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টায় লঞ্চে উঠেছি। তখনো লঞ্চের কোথাও বসার মতো জায়গা ছিল না। কেউ কেউ গত রাত থেকেই লঞ্চে অবস্থান করেছেন। বিকেলেও যাত্রী উঠিয়েছে। ছাদেও যাত্রী ভরা। অথচ এটা দুপুরের দিকে ছাড়ার কথা ছিল। 

দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দিনভর লঞ্চের ভেতরে নারী পুরুষ গরমে অতিষ্ঠ। শিশুরা চিৎকার করেছে। একটা লঞ্চে ৪/৫ হাজার যাত্রী হবে। অথচ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

অবশ্য লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের দাবি, অন্যান্য বছরের মতো এবারও ২০ রমজান থেকে লঞ্চগুলো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে। কিন্তু যাত্রীদের তেমন সাড়া মেলেনি। শেষ সময় কিছু যাত্রী পাওয়া গেছে। তবে আইন মেনে তারা যাত্রী পরিবহন করেছেন।

3

এদিকে রোববার পর্যন্ত বেশিরভাগ রুটের লঞ্চের সব কেবিন বিক্রি হয়নি এমন খবরও পাওয়া গেছে। তবে বছরজুড়ে যাত্রী সংকটের কারণে নির্ধারিত ভাড়া থেকে কিছুটা কম রাখলেও ঈদের সময় কেবিন ও ডেকের ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়ার অভিযোগ আছে যাত্রীদের।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বেলা ১টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ঢাকা নদী বন্দরে বিভিন্ন নৌ-পথ থেকে লঞ্চ এসেছে ১০৬টি। আর বন্দর ছেড়ে গেছে ১১১ টি লঞ্চ। অপেক্ষমান ছিল ১২টি লঞ্চ।

পটুয়াখালী রুটের পারাবত লঞ্চের যাত্রী নুরুজ্জামান মামুন প্রতিবেদকের কাছে লঞ্চের যাত্রী চাপের কথা তুলে ধরে বলেন, কেবিন থেকে বাইরে বের হওয়ার মতো অবস্থাও নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর এবছর ঈদের আগে এমন ভিড় দেখলাম।

বরগুনা রুটের এম ভি শাহরুখ লঞ্চের যাত্রী আমানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ভেবেছিলাম লঞ্চে খুব একটা ভিড় হবে না। কিন্তু এসে দেখি প্রচুর যাত্রী। কোনো ফাঁকা নেই। আগে কেবিন বুকিং দেওয়া ছিল তাই দুর্ভোগে পড়তে হয়নি।

4

যাত্রী সংকটের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইডব্লিউপিসিএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল ঢাকা মেইলকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমাদের যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু যাত্রী পাই না। আগে সময়ের আগে ঈদের সময় লঞ্চ ছেড়ে দিতে বাধ্য হতাম। গত বছর ঈদে আমরা ভালো যাত্রী পেয়েছি। স্বাভাবিকের চেয়ে ঈদে যাত্রী বেশি হলেও এ বছর যাত্রী একেবারেই কম। তবে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কারণে সোমবার যাত্রী বেড়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবিরও যাত্রী সংকটের কথা জানালেন। তবে যাত্রী কম থাকলেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে তাদের প্রস্তুতির কম নেই বলে জানালেন।

ঢাকা মেইলকে এই কর্মকর্তা বলেন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে যানজটের কারণে যে পরিমাণ সময় লাগে ততক্ষণে পদ্মা সেতু দিয়ে গন্তব্যে চলে যেতে পারছে। ফলে অনেকেই এ পথে আসছেন না। তবে যারা লঞ্চে যাবেন তাদের যাতে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ঘাটে এমনিতেও হকার কম। তারপরও যাতে কেউ না থাকে সেটা মনিটরিং করা হচ্ছে। 

বিইউ/এএস