images

জাতীয়

গা ঢাকা দিয়েছেন মালিক, প্রকৃত তথ্য দিতে লুকোচুরি!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

২৪ মার্চ ২০২৪, ০১:২৭ এএম

‘ওই এত বড় গলায় চিল্লাও ক্যা। ওরা আবার হুনবো। মুখ ফসকে কিচু কইও না আবার। হেরা (সাংবাদিকরা) গিয়া লেইখা দিব।’ 

শনিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে লালবাগের ক্লাবঘাটের পাশে থাকা ইসলামবাগ হাজী বাবুল রোডের লৌহজং রাবার অ্যান্ড এশিয়ান প্লাস্টিক কারখানার নিচে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ওই এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি। এ সময় তার চোখেমুখে একটা আতঙ্ক।

তখন থেকে সাত ঘণ্টা আগে হাজী বাবুল রোডের লৌহজং রাবার অ্যান্ড এশিয়ান প্লাস্টিক কারখানাটিতে আগুন লেগেছিল। তিন ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলার পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরাপুরি আগুন নেভাতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। কারখানাটিতে জুতার সোল তৈরি করা হতো। আগুন লাগার খবর পেয়ে সেখানে ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় কারখানাটির মালিকপক্ষের লোকজন আসেন। তারা কিছু সময় দুই একজন সাংবাদিককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দ্রুত গেট বন্ধ করে দেন। মালামাল চুরি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তারা গেট বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

Dhaka-3তখন বাইরে থাকা সাংবাদিকরা প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে আগুন লাগার বর্ণনা শুনছিল। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে জানা যায়, কারখানাটির মালিক সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বাবুল। তিনি (২০০১-২০০৭) সাল পর্যন্ত ২৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। বিএনপি মতাদর্শের বাবুল এখন লালবাগ থানা বিএনপির আহ্বায়ক। 

কারখানাটির নিচে দেখা হয় মালিকের চাচাতো ভাই শরীফের সঙ্গে। তিনি জানান, গত ২০ বছর ধরে কারখানাটি চালাচ্ছেন বাবুল। তবে তিনি সেই এলাকায় থাকেন না। ওই সময় তাকে সেখানে পাওয়াও যায়নি। 

প্রকৃত তথ্য দিতে লুকোচুরি!

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালবাগের ক্লাবঘাটের ওই কারখানায় মূলত স্পন্স জুতার সোল তৈরি হতো। কারখানাটিতে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। প্রতি সপ্তাহে চার দিন চলতো এবং বাকি দিনগুলোতে বন্ধ থাকতো।

শনিবার সকাল থেকে কারখানাটি চালুর কথা ছিল। কিন্তু ভোরেই আগুন ধরে যায়। পরে দুপুরে শ্রমিকরা এসে পুড়ে যাওয়া মালামাল সরাতে থাকেন।

দুপুরের দিকে কারখানাটির ভেতরে প্রবেশের সুযোগ মেলে এই প্রতিবেদকের। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, তৃতীয় তলায় গুদাম। তাতে রাখা হয়েছে জুতার সোল তৈরির কাঁচামাল (পুরান জুতার কাটা ছোট ছোট টুকরো)।

শ্রমিকরা আলো আঁধারিতে সেগুলো বস্তায় ভরছেন। আবার কেউ সেগুলো বস্তা মাথায় তুলে নিচে নামাচ্ছেন। তৃতীয় তলায় রাখা হয়েছে তৈরি শত শত জুতা। এক পাশে শ্রমিকদের থাকার ঘর। তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, তৃতীয় তলার উত্তর দিকের দেওয়াল ভাঙতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। না হলে আগুন নেভানো কঠিন হতো বলে জানিয়েছে ফায়ারের কর্মীরা।

পোড়া ভবনটির নিচে আসতেই দেখা হয় কারখানার মালিকের ভাই আব্দুল কাদ্দুস রানা ও চাচাতো ভাই শরীফের সঙ্গে। তারা বলেন, কারখানাটির মালিক সেটি নিজে দেখভাল করেন না। তারা দেখতে এসেছেন। তারা সবাই ব্যবসায়ী।

Dhaka-2কারখানার মালিক বাবুল কোথায় জানতে চাইলে তারা জানান- উনি বিদেশ চলে গেছেন। কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না জানিয়ে তারা বলেন, কারখানার কোনো সমস্যা নাই। গ্যাস বিদ্যুৎ লাইসেন্স সব ঠিক আছে।

সেখান থেকে আসার পর বিকেলে মালিক বাবুলের চাচাতো ভাই শরীফের সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাবুল ভাইকে আমরা সকাল থেকে পাচ্ছি না। আসলে উনি বিদেশ যাননি। তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। এরপর তার ফোন নম্বর চাইলে তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘আসলে আমরা তাকে এখানে আনতে চাচ্ছি না। তিনি একসময় বাংলাদেশ পাদুকা সমিতির সভাপতি ছিলেন। আমি এখন এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় ফোনম্যান ও দারোয়ান ছাড়া কারখানায় আর কেউ ছিল না। লোকজন আগুন দেখে তাদের ডেকে তুলেছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানার মালিক বাবুল সকাল থেকে কারখানাটির কাছেই আসেননি। এ কারণে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার লোকজনকে ভায়া হিসেবে পাঠান। যারা দুপুর পর্যন্ত থেকে নানা কিছু দেখভাল করেছেন।

Dhaka-4

কারখানাটির শ্রমিক নজরুলের দাবি সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। আর এলাকাবাসী দাবি, অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। এছাড়াও আগুন লাগার সময় কারখানাটির তৃতীয় তলায় কিছু শ্রমিক ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের ডেকে তোলা হয়েছে। না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতো। কারখানাটি চব্বিশ ঘণ্টাই লোক থাকতো।

এলাকাবাসী আরও জানান, ইসলামবাগ হাজী বাবুল রোডের বেশিরভাগ কারখানায় পুরনো প্লাস্টিক ও পুরনো জুতার রিসাইক্লিং করে সোল এবং গরুর রাখার সেডের নিচে ব্যবহার করা ফোম তৈরি করা হয়। এসব কারখানায় উৎপাদিত ফোম সারাদেশে যায়।

এমআইকে/এমআর