images

জাতীয়

পল্লবীতে যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যে...

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১৮ মার্চ ২০২৪, ১০:০০ পিএম

রাজধানীর পল্লবীর সেকশন-১২ নম্বরের ১৩ নম্বর সড়কে ফয়সাল নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক বিক্রি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝামেলার কথা জানা যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে তানজিলা নামে এক নারীকে ফয়সাল ইভটিজিং করেছিলেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। এর সূত্র ধরে তার ভাই ও স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করছে কেউ কেউ। কিন্তু এর ভিত্তি  খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তারা তদন্ত করছেন। এতে হত্যার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

প্রতিবেশীরা বলছেন, হত্যার শিকার ফয়সাল ছিলেন গাঁজা ব্যবসায়ী। অন্যদিকে হত্যাকারীরাও মাদক ব্যবসায়ী। যদিও তার পরিবারের দাবি ভিন্ন।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে মিরপুর সেকশন ১২ এর সি ব্লকের ১৩ নম্বর রোডের কাটাগলির মুখে (আলিফ টেলিকম) গিয়ে দেখা গেল, এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি সেই রোডে। এ রোডের বি ব্লকের ২১১ নম্বর বাসার সামনে রক্তের চিহ্ন আবছা দেখা যাচ্ছে। সেই বাসার দারোয়ান জাকির বলেন, সেদিন আমরা ইফতার করছিলাম। হঠাৎ শব্দ শুনলাম। পরে বের হয়ে দেখি একটা পোলার পা রক্তে ভরে গেছে। একজন বলছিল তাকে হেল্প করতে৷ এরপর তারে আমরা রিকশায় তুইলা দিলাম।

তবে এ সড়কে এখনো আতঙ্ক মানুষের চোখে মুখে। পড়ন্ত বিকেলে অনেকের সাথে এই হত্যাকাণ্ড কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ ভয়ে হত্যাকারীদের নাম ও পরিচয় বলতে আগ্রহ দেখাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সড়কের ১২ নম্বর রোডে ওঁৎ পেতে ছিল রাব্বী, শাহীন, সায়মন, কাল্লুসহ ১৫ থেকে ২০ জন। কেউ সরাসরি আবার কেউ নেপথ্যে থেকে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এসড়কের সামান্য দূরেই সায়মনের বাড়ি। সায়মন এখন পুলিশের হাতে গ্রেফতার। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে৷ তাদের মধ্যে ইসমাইল নামে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সন্ধ্যার আগে হত্যার শিকার ফয়সালের বাসায় গেলে তার মা লিলি বেগম ঢাকা মেইলকে একটা কথাই বলেন, ‘আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, তবে জানি না এ বিচার পাব কি না।’

আরও পড়ুন

পল্লবীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যায় আরও দুজন গ্রেফতার

তিনি জানান, তার ছেলে মারা যাওয়ার আগে পাঁচজনের নাম স্পষ্ট করে তাকে বলে গেছেন। যারা তাকে ওই সময় কোপানোর কাজে জড়িত ছিল। তারা হলেন- শাহীন, রাব্বী, তানাকা, কাল্লু ও সায়মন। তিনি এসব হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেন।

মায়ের দাবি, ফয়সাল যখন যা পেতেন তাই করতেন। কখনো কারচুপি, কখনো রিকশা চালানো আবার কখনো লেবারের কাজও করতেন।

বের হওয়ার পথে নিহত ফয়সালের প্রতিবেশী টিপুর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, ঘটনার আগের দিন শাহীন ও বাপ্পির লোকজনের মধ্যে টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়। তবে সেই যুবক ঝামেলা কোন টাকা নিয়ে তা স্পষ্ট করেননি।

তার সাথে সেলিম নামে আরেক যুবক বলেন, মূলত ফয়সালের সাথে আগে থেকে শত্রুতা ছিল। সেই শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

Pallab33

তবে প্রতিবেশীরা মনে করেন, এ হত্যাকাণ্ডে যে গুজব তোলা হয়েছে সেটি সত্য নয়। এর নেপথ্যে আরও অনেক কারণ রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যারা ফয়সালকে হত্যা করেছে তারা কম বেশি প্রত্যেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের নামে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

নিহতের মা তানজিলা নামে এক নারীর কথা তুলে তার সাথে ঝামেলার দাবি করলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। সেই তানজিলার বাসার গেটে এখন তালা ঝুলছে।

নিহত ফয়সালের ভাই আব্দুর রহমান বলেন, মাসুম নামে ফয়সালের এক বন্ধু ছিল। মাসুমের সঙ্গে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য আকাশ, রাব্বি, ন্যাটা শাহীনসহ কয়েকজনের দ্বন্দ্ব ছিল। তিন দিন আগে মাসুমের সঙ্গে ওদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর মাসুম ফয়সালকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। ফয়সাল তাদের মধ্যকার বিবাদ মেটাতে গেলে ওই কিশোর গ্যাং সঙ্গে ফয়সালেরও কথা কাটাকাটি হয়। এতে তারা ফয়সালের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফয়সাল শনিবার ইফতার থেকে ফেরার সময় তাকে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন

পল্লবীতে যুবককে কুপিয়ে মারল কিশোর গ্যাং

এ বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে আসলে কী কারণে ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে।

ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ডিসি জসীম উদ্দীন মোল্লা ঢাকা মেইলকে বলেন, তদন্তে প্রণীধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আর বেশি কিছু বলতে চাই না। খুব শিগগির বিষয়টি জানাবো।

ইভটিজিং নাকি অন্য কিছু এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফয়সাল তার প্রেমিকাকে নিয়ে একটি গান বেঁধেছিল, যা তার প্রেমিকা আমাদের জানিয়েছে। এটা সে গেয়েছিল বলে তানজিলা অভিযোগ করেছে তাকে ইভটিজিং করেছে। কিন্তু তার প্রেমিকার দাবি, এটা তাকে নিয়ে লেখা এবং ফয়সাল সেটা গিয়েছিল। তবে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে সব বিষয়ে উঠে আসবে।

এমআইকে/জেবি