নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে আজ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকরীদের গ্রেফতারের ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত শেষ হয়নি আলোচিত ঘটনাটির। ঘটনার এতদিন পরেও কেন বিচার চেয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে এ প্রশ্ন সাংবাদিক নেতাদের। আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে সেটাও জানতে চান তারা।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এই প্রশ্ন করেন।
তারা বলেন, ২০১২ সালের এদিন ভোরে আমাদের প্রিয় দুই সহকর্মী সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। দেখতে দেখতে এই হত্যাকাণ্ডের ১২তম বছর হয়েছে। দুঃখজনকভাবে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রকৃত হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হয় হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে ডিআরইউসহ গোটা সাংবাদিক সমাজ আজও সোচ্চার।
সাংবাদিকরা বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত নির্মম এ ঘটনার বিচার আমরা পাইনি। বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, এক যুগে তদন্ত কাজও শেষ হয়নি। বিচার পেতে আরও কত বছর লাগবে আমরা তা ধারণা করতেও পারি না। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যে দিন তদন্ত শেষে বিচার পাবো। বিচার পাওয়ার দাবিতে আমরা সবধরনের আন্দোলন করেছি, কিন্তু কোনো কূল-কিনারা পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা অপেক্ষায় থাকতে চাই। কিন্তু সাগর-রুনির হত্যার বিচার হতেই হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু ৪৮ দিন, ৪৮ মাস নয়, ১২ বছর পার হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচারের জন্য ৫০ বছর লাগতে পারে।
সাংবাদিকেরা আজকে অনেকের অভিন্ন শত্রুতে পরিণত হয়েছে জানিয়ে ডিআরইউর সাবেক সভাপতি মোরসালীন নোমানী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেখানে বিদ্যমান থাকে, সেখানে কিছুই থাকে না। র্যাব যদি না পারে, তদন্ত প্রতিবেদন না দিতে পারে, তাহলে তারা বলে দিক।

এদিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া এক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান সাংবাদিকরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘তদন্তে যত দিন সময় লাগে সঠিকভাবে দোষী নির্ণয় করতে, তাদের ততটুকু সময় দিতে হবে। সেটা যদি ৫০ বছর হয়, ৫০ বছর দিতে হবে।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ‘আমরা আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করব না।’
ডিআরইউর সহ-সভাপতি মো. শামীম বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছ থেকে এমন মন্তব্য আমরা আশা করি না।’
সংগঠনটির সদস্য ফারহানা জ্যোতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার আদায়ে সাংবাদিক নেতাদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
সাগর সরোয়ারের সাবেক সহকর্মী মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, সাগর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তেল-গ্যাস, দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করত। আমরা জানি না তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব রিপোর্টের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যার তদন্ত রিপোর্ট এবং বিচার চাই।
কর্মসূচিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/জেবি