মোস্তফা ইমরুল কায়েস
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
মাস ছয়েক আগেও রাজধানীর পরীবাগ ওভারব্রিজের পূর্বদিকের সড়কটি ফাঁকা পড়ে থাকতো। সন্ধ্যার পর লোকজনেরও তেমন আনোগোনা থাকতো না। প্রয়োজন ছাড়া এই সড়ক অনেকে ব্যবহারও করতেন না। কিন্তু এখন চিত্র পুরোই ভিন্ন। সন্ধ্যার আগেই সড়কটির মুখে বানানো জননী ও গর্বিত বর্ণমালা ভাস্কর্যের কিছুটা সামনে থেকে স্ট্রিট ফুডের দোকান শুরু। বেলা ডোবার সাথে সাথে ক্রেতাদের ভিড়ে গিজগিজ করে এ সড়কটি। কোনো কোনো দোকানে ক্রেতার ভিড় সামাল দিতে বিক্রেতা হিমশিম খেতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস ছয় আগে প্রথম সেখানে কাবাব বানিয়ে বিক্রির জন্য ভাসমান ভ্যান দোকান নিয়ে বসেন সালেহ নামের এক যুবক। তার দেখাদেখি আরও তিনজন বসেন। পর্যায়ক্রমে এখন সেখানে দোকানের সংখ্যা ৩০টির মতো। কোনোটাতে বিক্রি হয় ফুচকা, কোনোটাতে কাবাব, আইসক্রিম, পিৎজা, দুই ফুচকা, বার্গার, রান্না করা নুডলস, কিসেন স্যুপ, মমো, লাচ্ছি, বিভিন্ন ধরনের মিল্ক সেক।
কথা হচ্ছিল ফুচকা বিক্রেতা সোহেলের সাথে তিনি বলছিলেন, তারা তিন বন্ধু মিলে একটি দোকান চালাচ্ছেন। বিক্রি মোটামুটি ভালোই। সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় জমে যায়। প্রতি প্লেট ফুচকা ৭০ টাকায় বিক্রি করেন। সব মিলে দিন শেষে তাদের সব খরচ মিটিয়েও অর্ধেক লাভ হয়।
সড়কটিতে বাহারি সব খাবারের দোকান বসে। যেমন এক দোকানে আপনার সামনেই পিৎজা বানিয়ে খাওয়াবে। তবে এজন্য আপনাকে আগে টোকেন নিতে হবে। খাবার তৈরি হলে আপনাকে ডেকে বলা হবে— আপনার পিজ্জা তৈরি হয়েছে, নিয়ে যান।
এখানে কয়েকটি লাইভ পিৎজার দোকান আছে। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন তারা ১৫০-২০০টি পিৎজা সরাসরি বানিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন।
এখানে নিয়মতি পিৎজা খেতে আসেন সোনালী আক্তার। তিনি তার মাকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। বলছিলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে এখানে পিৎজা খেতে আসি। আসলে পিৎজা বানিয়ে বাসায় নিয়ে খেতে খেতে শক্ত হয়ে যায়। ফলে এখানে এসে আড্ডাও দেই, লাইভ পিৎজাও খেয়ে যাই।
সড়কটি যারা দোকান বসিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ। এসব দোকান চালিয়ে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। রায়হান নামে এক তরুণ বলছিলেন, দুই বন্ধু মিলে মমো তৈরি করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন সব খরচ বাদে ২-৩ হাজার টাকা লাভ থাকে।
মোহাম্মদপুরের টাউন হলের সামনেও একই চিত্র। এখানে বেশিরভাগ দোকানেই বার্গার বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পর এখানে শত শত মানুষের ভিড় জমে যায়।
একটি বার্গার দোকানের কর্মী রিমন বলেন, আমরা প্রতিদিন অন্তত ৫০০ বার্গার বিক্রি করি। বার্গারে লাভ বেশি। প্রতি বার্গার দাম ৬০ থেকে ১২০, আবার বড় হলে ১৮০ টাকা।
এই জায়গায় আপনি গেলে শুনবেন— আসেন, খেয়ে যান এমন হাঁকডাক। এমনকি অনেকে আপনাকে হাত ধরে দোকানের দিকে টানাটানি শুরু করবে। দোকানগুলোর বেশিরভাগ ক্রেতাই তরুণ-তরুণী। অনেকে পরিবার নিয়েও আসেন।
গেল বৃহস্পতিবার টাউন হলের সামনে বার্গার খাচ্ছিলেন রাসনা ও রুহুল দম্পতি। তারা জানান, নবদম্পতি হিসেবে তারা ঘুরতে এখানে আসেন এবং দুটি করে বার্গার কিনে খান।
দোকানীরা জানান, আগে তিন চারটি দোকান বসলেও এখন সেখানে ২৬টি দোকান বসে। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতার ভিড়। তবে সবারই চেষ্টা মানে ও স্বাদে ভিন্নতা আনতে। এসব দোকানে যেমন বিভিন্ন ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে তেমনি বেকার যুবকরাও কিছু টাকা আয় করতে পারছেন।
এমআইকে