নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ মে ২০২২, ০২:৩৮ পিএম
আগামী জুন মাসেই খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতু। তবে সেতু চালু হলেও চলবে না ভারী কোনো যানবাহন। যেসব যানকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে সেগুলোর গতিও থাকবে কম।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুটি চালু হলেও নিচের অংশে রেললাইনের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। ঢালাই দেওয়া অবস্থায় সেতু দিয়ে যান চলাচলে যে কম্পন সৃষ্টি হবে তাতে রেল লাইনের ঢালাইয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধরতে পারে ফাঁটল। রেল কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী ঢালাইয়ের সময় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতুতে এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা চলছে। শেষ হয়েছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। সেতুতে বসেছে সব কয়টি ল্যাম্প পোস্ট। রোড মার্কিংয়ের জন্য পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। শিগগিরই এই কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে চলছে ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ, যা এই মাসের মধ্যেই শেষ করার কথা রয়েছে। সেতু দিয়ে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও নিচের অংশে রেলের বড় একটি কাজ বাকি। গ্যাস পাইপ লাইন, ওয়াকওয়েসহ বাকি কাজ শেষ করে জুনেই রেলের কাছে সেতুর নিচের অংশ বুঝিয়ে দেবে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘সেতু চালুর পর সৃষ্ট ভাইব্রেশন মনিটর করতে সেতু কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। যান চলাচলের পর কী পরিমাণ ভাইব্রেশন আছে, এতে করে কংক্রিট ঢালাইয়ে সমস্যা হয় কি না তা মনিটর করতে বলা হয়েছে। যদি কম্পনের কারণে ঢালাইয়ে সমস্যা হয় তবে ওপরে চলাচলকারী যানবাহনের স্পিড লিমিট করে দিতে পারে। যেমন হেভি ট্রাক চলাচলে রেস্ট্রিকশন করে দেওয়ার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে পারি। এতে করে ভাইব্রেশনটা কম হবে।’
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, যান চলাচল পর্যবেক্ষণ করে কত কম্পনে রেল লাইনের কাজ করা যাবে তা নির্ধারণ করবে রেল কর্তৃপক্ষ। তথ্যউপাত্তসহ যে সুপারিশ তারা করবে তা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুতে যান চলাচলের পর কম্পনের মাত্রা কতটুকু এটা তারা দেখবেন। কম্পনের মাত্রা যদি সহনীয় না হয় তবে আমাদের জানাবেন। তারা যদি তথ্যউপাত্ত নিয়ে আসে যে, এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না-তবে সে অনুযায়ী কাজ হবে। রেলের অংশের কাজ শুরুর পর লাইন বসাতে অন্তত ছয় মাস লাগবে। সেই হিসাব অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ পদ্মা সেতু নিয়ে রেল চলাচল করতে পারবে বলে আশাবাদ রেল কর্তৃপক্ষের।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ।
সেতুর মূল আকৃতি দোতলা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে।
এজেড/এমআর