জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০১ মে ২০২২, ০৬:৩৩ পিএম
ঘনিয়ে আসছে ঈদের দিন। ছুটে চলছে ঘরমুখো মানুষ। যে যেভাবে পারছেন বাড়ির পানে ছুটে চলছেন। রহিমা খাতুন (৪২) ছুটে চলাদের একজন। কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে সবার কাছে পরিচিত হয়েছেন রহিমা খালা হিসেবে।
রোববার (১ মে) সকাল ১০টায় গাবতলি বাস টার্মিনালের একটু সামনে দর কষাকষি করে রহিমা চেপে বসেন একটি পিকআপে। বগুড়া পর্যন্ত ভাড়া দুইশ। শুধু রহিমা খালা নয়, তার মতো ওই পিকআপে আরও ২০ জনের মতো যাত্রী। যাদের বেশিরভাগই নারী।
জরিনা আক্তার পোশাক শ্রমিক যাবেন সিরাজগঞ্জ। জুলেখা, স্বর বানু, খালেদা আক্তার যারা কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ বাসাবাড়িতে কাজ করেন সবাই চেপে বসেছেন পিকআপে। এছাড়াও রিকশা-ভ্যানচালক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক বহু শ্রমিকও বাড়ি ফিরছেন এই পিকআপেই।
ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও এভাবেই প্রতিদিন ট্রাক, পিকআপ চেপে বাড়ি ফিরছেন রহিমা খালার মতো মানুষেরা। পরিবহনে সিট না পাওয়ার বিড়ম্বনা এড়িয়ে তুলনামূলক কম খরচে নিম্নআয়ের অনেক মানুষের ঈদযাত্রায় ভরসা এমন ট্রাক বা পিকআপ।
কড়া রোদ মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন গাবতলি থেকে ড্রাইভার ছুট দিল বগুড়ার উদ্দেশে। যাত্রার আগে রহিমা খালা ঢাকা মেইলকে বলেন, বাসের চেয়ে ভাড়া কম। কষ্ট হলেও বাড়ি যাবো এতেই ভালা লাগছে।
রহিমা খালা বলেন, দুই বছর যাইনি। আমার সঙ্গে থাকা পাশের বাসায় হালিমা, আছিয়া জয়নব সামনের গাড়িতে উঠছে আর আমরা দুইজন এই গাড়িতে।
একই পিকআপের যাত্রী সুমি আক্তার বলেন, গার্মেন্টের যে বেতন তাতে ঈদে কেনাকাটা আছে। ভাড়াও বাড়ে। এই গাড়িতে গেলে যাওয়া-আসা ৪০০ বা ৫০০ লাগে। যদি বাসে যাই, যাইতেই ৫০০ লাগবো, আরও বেশিও লাগতে পারে।
আমিনবাজার ব্রিজে যাত্রী বোঝাই ট্রাকের চালক রহিম হোসেন বলেন, যাবো রংপুর। কাঁচামাল নিয়ে সকালে কারওয়ান বাজারে নামাইছি। সেখান থেকেই বাজারের অনেক শ্রমিক, রিকশাচালক উঠেছেন। কেউ টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, হাটিকুমরুল, বা রংপুর যাবে। ভাড়া কারও একশ কারও দুই-আড়াইশ।
ট্রাকচালক রহিম আরও বলেন, খালি গাড়ি যেতেই হয়। এরমধ্যে দুই তিন হাজার টাকা আয় হলো, মানুষও যেতে পারলো।
আমিনবাজার এলাকায় অসংখ্য ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপে সম্প্রতি বাড়ি যাওয়া মানুষের এমন ভিড় দেখা গেছে। কোনো ট্রাকে ওপরে বাঁশ বেঁধে রোদ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগই থাকে খালি। চাপাচাপি করে বসে, রোদে পুড়তে পুড়তে যাচ্ছেন বাড়ি।
শ্যামলী থাকেন তারেক ও তার স্ত্রী। সন্তানসহ এভাবেই যাচ্ছেন বাড়ি। তারেক বলেন, আমরা এভাবেই যাই। সমস্যা নাই। গাড়ি চলতে থাকলে রোদ তেমন একটা গায়ে লাগে না। বাতাস লাগে। তবে জ্যামে পরলে রোদে জানডা শেষ হইয়া যায়।
রাজধানীর অন্যান্য টার্মিনাল থেকেও ঘরমুখো মানুষের স্রোত দেখা গেছে। ঈদের আনন্দে পথের কোনো ভোগান্তি দমিয়ে রাখতে পারে না। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সব সয়েই বাড়ির পানে ছুটে মানুষ।
ডব্লিউএইচ/আইএইচ