images

জাতীয়

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেষ করা নিয়ে সিইসির কণ্ঠে শঙ্কা!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে: সিইসি
  • বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতো
  • গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই
  • আমেরিকাকে বুঝতে হবে কারা আগুন, হরতাল দিচ্ছে
  • বিরোধী দল কারা হবে এই প্রশ্নে বিব্রত নয় ইসি

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি তা বর্জনের ডাক দিয়েছে। এছাড়াও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জনগণ এই নির্বাচন প্রতিহত করবে এমন কথাও বলা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। এমন অবস্থায় ভোটের ঠিক আগের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপি অংশ নিলে আরও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতো। তবে নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ শঙ্কার কথা জানান।

আরও পড়ুন

নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় বলা যাবে না: সিইসি

ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আশা করি ভোটাররা আসবে।’

ভোটের আগের দিনে নির্বাচন কমিশনের এই সংবাদ সম্মেলনে দেশের সিনিয়র সাংবাদিকদের পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসা বিদেশি সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্নবানে জর্জরিত সিইসি দেশের এবং বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তবে শুরুতে নির্বাচনের সার্বিক তথ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা, প্রার্থী ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এটি আরও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতো। তারা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আমরা বলব, তাদের (ভোটার) ভোট দিতে আসা উচিত। এটি তাদের পবিত্র রাজনৈতিক কর্তব্য যে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করা।

আরও পড়ুন

আমরা চাই ভোট আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিলো তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে। আগুন দেখে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত। কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি।

cec_2

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতটা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে। আশা করি ভোটাররা আসবে। আরও ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, সেটা হয়তো দেখতে পারবেন।

সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন কি কোনো রাজনৈতিক দল? কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক...। কোনো বিশেষজ্ঞ কি বলবেন যে, দশ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন, দলগুলো সমঝোতায় আসলে ভোট করুন। তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ করে দেবো।

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ভোটে রইল কতটি দল, প্রার্থী কতজন

তিনি বলেন, ইসির একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের জন্য সম্পৃক্ত থাকবেন না। সেই ভোটগ্রহণের মধ্যেই যদি কারচুপি হয়, কিছু দায়ভার আমাদের ওপর আসবে। কেন্দ্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রিসাইডিং অফিসার। তার দায়িত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দায়ভার আপনাদেরও নিতে হবে। কেননা, ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ অধিকার থাকবে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকে সিলেশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরও কিছু বলছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না। এ সংকট রাজনৈতিক।

তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই। কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি। আপনারা দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন। এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উঠে আসলে মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবে।

আরও পড়ুন

১৯৭৩-২০১৮: কোন সংসদ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছে?

অন্য প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের নিরাপত্তায় আট লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে। বড় দল ভোট বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ হলে আমরা কিছু মনে করব না। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলবে, সেটা অপরাধ। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।

মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না।

তিনি বলেন, আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দফতর।

আরও পড়ুন

আগের ১১টি সংসদ নির্বাচনে যত দল ও প্রার্থী

এই নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, সরকার কে হবে তা জানা; এই পরিস্থিতিতে আপনি বিব্রত কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।

সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বডি। আমি বলতে চাই আমরা বিশ্বাস করি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছতামূলক নির্বাচন। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক সেটা চাই।

এ সময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

বিইউ/এমএইচএম