images

জাতীয়

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করে তোপের মুখে যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩২ পিএম

Failed to load the video

বেসরকারি চাকুরে সাগর। ঈদযাত্রায় মাকে এগিয়ে দিতে এসেছেন মহাখালী বাস টার্মিনালে। দীর্ঘ সময় নির্ধারিত কাউন্টার খোঁজ করলেও কারও দেখা পাননি। কারণ, কাউন্টার বন্ধ। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট পর এক পরিবহণ শ্রমিক এসে জানালেন, কাউন্টার বন্ধ। সরাসরি বাসে গিয়ে বসেন। ওই সময় টিকিট কাটতে চাইলেও যাত্রাপথে কাটার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান এই পরিবহন শ্রমিক।

পরে বাসে এসে সাগর জানতে পারেন, সাধারণ সময় ২০০ টাকা ভাড়ায় নিরালা পরিবহনে টাঙ্গাইল যাওয়ার কথা থাকলেও এখন ৩০০ টাকা দিতে হবে। যদিও বাড়তি ভাড়া দেওয়ার কোনো সুস্পষ্ট কারণও বলছেন না পরিবহন শ্রমিকরা।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। আর যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সমাধানে এসেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) দুই সদস্য।

Eid Journey

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাগর জানান, এখানে নিরালা পরিবহনের কাউন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কাউন্টারে টিকেট না দিয়ে যাত্রাপথে টিকেট দেওয়ার কথা বলছেন তারা। অন্যদিকে ভাড়া দাবি করা হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা অন্য সময়ের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি।

এই পরিবহনটির অন্তত ১০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়তি টাকা নিয়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, টিকিট দিলে কেউ কেউ ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করতে পারেন। এ সময় আমাদের সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান যাত্রীরা।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএ’র দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) উথাইনো (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) ছাড়াও অরও একজনকে ঘটনাস্থলে আসতে দেখা যায়। পরে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একজন যাত্রী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তার কাছে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।’

দীর্ঘ এক ঘণ্টা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেন প্রতিবেদক। এ সময় আরও কয়েকজন যাত্রী এসে বিআরটিএর সদস্যদের একই অভিযোগ করতেও দেখা যায়। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে ঊর্ধ্বতন তিন সদস্যকে এসে কথা বলতে দেখা যায়।

Eid Journey

এ সময় অভিযোগ করা যাত্রীদের হুমকি দিতেও শুনা যায়, ‘বেশি ভাড়া না দিলে বাস বন্ধ থাকবে। আগামী তিন দিনেও বাস ছেড়ে যাবে না।’ পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মেইলের প্রতিবেদক হুমকি দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় না দিয়েই অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে স্থান ত্যাগ করেন।

এদিকে, সরেজমিনে নিরালা পরিবহনের বাসটিকে নির্ধারিত সময়ের পরও অন্তত দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা যায়। পরে বাসটিতে উঠে দেখা যায় যাত্রার অপেক্ষায় রয়েছেন অন্তত ২০ জন যাত্রী। তারা সবাই বলছেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় অভিযোগ করায় এখন আর বাসটি ছেড়ে যাচ্ছে না।’

এ সময় বাসটির ড্রাইভার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের পোষায় না। যাওয়ার সময় যাত্রী পেলেও, আসার সময় খালি আসতে হয়। ভাড়া বেশি না নিয়ে উপায় নেই। সবশেষ দুই ঘণ্টা পরও বিআরটিএর প্রতিনিধি দল কোনো সমাধান দিতে পারেনটি। পরে অভিযোগ করা যাত্রীকে বাড়তি ভাড়া দিয়েই যেতে দেখা যায়।

Eid Journey

এ সময় অভিযোগ করা সাগর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাই, অভিযোগ করে বিপদে পড়েছি। বিআরটিএ বলেন, আর বাস শ্রমিক বলেন- তারা সবাই এক। অভিযোগ করায় আমাকে না নিয়েই তারা চলে যাচ্ছে। আমাকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, গত বছর এমন একজন অভিযোগ করায় তিনদিন নাকি ওই যাত্রীকে ঘুরানো হয়েছিলো। কোনো বাসই তাকে নেয়নি। বিআরটিএর চেয়ারম্যান আসলেও নাকি নেবে না। কি আর করার, যেতে তো হবেই। এ জন্য ভয়ে যাত্রীরা অভিযোগও করে না।’

এদিকে, বিআরটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের নির্ধারিত ভাড়া ২০৭ টাকা। যদিও তারা আদায় করছেন ৩০০টাকা। সময় এবং সুযোগ বুঝে আরও বেশি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে পরিবহনটির বিরুদ্ধে।

কাউন্টার বন্ধ রেখে, টিকিট না দিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে তেমন কিছুই বলতে রাজি হননি মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএর দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) উথাইনো। তবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে একটাই অভিযোগ এসেছে। তাকে আমরা বাসে উঠিয়ে দিয়েছি। ঈদযাত্রা বলে তারা একটু বেশি ভাড়া চাইছেন।’

ডিএইচডি/আইএইচ