আমিরুল ইসলাম
২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৪:২৪ পিএম
ঈদযাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি চলছে। একটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারা সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতোই। দীর্ঘ অপেক্ষা ও ভোগান্তির পর পাওয়া যাচ্ছে ট্রেনের টিকিট। এই ভোগান্তি থেকে বাদ যায়নি পুলিশও। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ট্রেনের কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান।
এই পুলিশ কর্মকর্তা সদ্য বাবা হয়েছেন। সুযোগ আর ছুটি না পাওয়ায় এখনও বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এই ঈদে সেই সুযোগটা নিতে চান নাজমুল। নবজাতক শিশু নিয়ে জয়পুরহাট যাবেন তিনি। নিরাপদে যাত্রার জন্য ট্রেনের বিকল্প কিছু নেই। তাই ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের আশায় কমলাপুর স্টেশনে যান এই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে টিকিট কেনার সুযোগ পাননি।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে নাজমুল জানান, সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে যাত্রা করবো, তাই নিরাপদে যাওয়ার জন্য টিকিট নিতে কমলাপুর এসেছি। প্রথমে অনলাইনে টিকিটের জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তাই বাধ্য হয়ে কাউন্টারে টিকিট কাটতে এসেছি। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে টিকিট পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
নাজমুল বলেন, ২৯ তারিখ থেকে ছুটি শুরু হবে। তাই সেদিনের টিকিট কাটতে সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাতে কমলাপুর যাই। কিন্তু হাজারো মানুষের ভিড়ে সেদিনের টিকিট পাইনি। পরের দিন অর্থাৎ ৩০ তারিখের টিকিট পেতেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
নাজমুল বলেন, ২৫ এপ্রিল বিক্রি করা হয়েছে ২৯ তারিখের টিকিট। সেদিন কাউন্টারে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু টিকিট পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই ৩০ তারিখের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এদিকে, অফিসের ডিউটি ছিল। ছুটি নেওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু লাইন থেকে চলে যেতেও পারছি না। ২৯ তারিখের টিকিট না পাওয়ায় বাধ্যতামূলকভাবে ৩০ তারিখের টিকিট নিতে হচ্ছে।
নাজমুল জানান, যেহেতু পুলিশের ডিউটি ছিল সেটি যেমন জরুরি তেমনি ট্রেনের টিকিটও জরুরি। দুইটা এসির টিকিটের আশায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। ২৫ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি টিকিটের জন্য।
রাতে ডিউটি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে সারারাত পার হয়ে পরদিন সকাল ৮টায় ৩০ তারিখের টিকিট কাটতে পারবো যদি লাইনে দাঁড়িয়ে সারারাত অপেক্ষা করি। আবার রাতের ডিউটিও করতে হবে। কোনটা রেখে কোনটা করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমতাবস্থায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই আমার দুঃখ বুঝতে পারে। তাই লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই বলেন- ভাই! আপনি চলে যান ডিউটিতে। ডিউটি শেষ করে সকালে আসেন। আমরা আপনার জন্য লাইনের সিরিয়াল রেখে দেবো।
লাইনে দাঁড়ানো হাসান নিটোলের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি জানান, ওই পুলিশ অফিসার টিকিট না পেয়ে ছটফট করছিলেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। বারবার নানাজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছিলেন। যেহেতু পুলিশ আমাদের নিরাপদ রাখতে অনেক কষ্ট করে। বিনিময়ে আমরাও তাকে আশ্বস্ত করি, আপনি ডিউটিতে যান। ডিউটি শেষ করে আপনার আগের জায়গায় এসে দাঁড়াবেন। এই প্রস্তাবে লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই সায় দেন।
রাতে ডিউটি শেষ করে আজ (২৬এপ্রিল) সকাল ৬টায় আবারও কমলাপুরে আসেন নাজমুল। গতকালের রেখে যাওয়া জায়গাতেই দাঁড়ান টিকিটের জন্য। সকাল ৮টায় কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়লে প্রায় এক ঘণ্টা পর কাউন্টারে যাওয়ার সুযোগ হয় নাজমুলের। অবশেষে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে দুটি এসির টিকিট কিনতে সক্ষম হন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
টিকিট পাওয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, মানবিকতা যে এখনও বেঁচে আছে আজকে আমি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। অনেক ভোগান্তি শেষে টিকিট পেয়ে বেশ খুশি লাগছে। তিনি বলেন, কষ্টটা সার্থক হয়েছে। এবার পরিবার নিয়ে এসিতে সুন্দরভাবে যেতে পারবো। টিকিট পাওয়ার পর লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এএম/জেবি