মোস্তফা ইমরুল কায়েস
০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৯ এএম
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চালু করা হয় ঢাকা নগর পরিবহন। বেশ সুন্দর চলছিল। কিন্তু এখন আর সেই সুবিধা নেই বললেই চলে। প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা। কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
ঢাকা নগর পরিবহণের ঘাটারচর কাউন্টার। এখানে বাস চালকদের সহকারী মনসুর ও জাহাঙ্গীর। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা খেয়ালখুশিমতোই গাড়ী ছাড়েন; মন চাইলে বন্ধ করে আরাম করেন। তাদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ঘাটারচর কাউন্টারের এই দুই ব্যক্তির কাছে কাউন্টারের সংশ্লিষ্টরাও জিম্মি। তারা এখানে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। অফিসের নিয়মও মানেন না।
মনসুর ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিনে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। শিশু ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ২০ নারী-পুরুষ বাসের অপেক্ষায় আছেন কাউন্টারের সামনে। ঘণ্টা খানেক পর কাউন্টারের সামনে এলো ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৭৩৮ নম্বরের কাঁচপুর টু ঘাটারচর চলাচলকারী একটি বাস। যাত্রীরা ছুটে যেতেই মনসুর নামের সহকারি চালক চিৎকার করে বলতে লাগলেন- ‘বাস যাবে না, যাবে না’। এরপর তিনি বাসটি পার্কিং করলেন কাউন্টারের পশ্চিম পাশে। মনসুরের এমন কথা শুনে উপস্থিত যাত্রীরা হতভম্ব হয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২০ প্রার্থীকে শোকজ
মনসুর যখন বারবার বলছিলেন এ গাড়ি যাবে না, তখন কাউন্টারে টিকিট বিক্রির কাজে নিয়োজিত এক বয়স্ক ব্যক্তি ওঠে এলেন এবং তাকে অনুরোধ করলেন গাড়ি ঘুরিয়ে রওনা হওয়ার জন্য। তিনি যুক্তিও দিলেন যাত্রী তো ২০ জনের মতো আছেই। বাস ছাড়তে সমস্যা কোথায়? এবার মনসুরের সাফ জবাব-‘গাড়ি ফুল না হলে ছাড়া হবে না।’ এই বলে তিনি চালক এরশাদকে নিয়ে চলে গেলেন।
এ সময় এই প্রতিবেদক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনোকিছুর ভ্রুক্ষেপ না করে কাউন্টার থেকে সোজা রাস্তায় চলে যান। এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে কাউন্টার ত্যাগ করলেন।
লিমন নামে এক যাত্রী বলছিলেন, তিনি এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বাসটি এলো, ভাবলেন যেতে পারবেন। কিন্তু তা আর হলো না। বাসের চালকের সহকারী মনসুরের এমন আচরণ দেখে তিনি বলেন, এসব কর্মচারীর কারণে নগর পরিবহনের প্রকৃত সেবা মিলছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আন্তরিক ও কর্মঠ কর্মী নিয়োগ দেওয়া উচিত।
তার সঙ্গে থাকা সুমী নামে আরেক যাত্রী বলছিলেন, যদি তারা যাবেনই না তাহলে আমাদের এতক্ষণ বসিয়ে রাখলেন কেন? আর কেনইবা আমাদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হলো? তার এই কথার জবাব দিতে পারেননি উপস্থিত কাউন্টারের কর্মীরা।
আরও পড়ুন: নভেম্বরে নির্যাতনের শিকার ১৯১ নারী ও কন্যা শিশু
মনসুরের এমন আচরণ দেখে যাত্রীরা আর দেরি না করে অন্যকোনো যানবাহনে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওনা হলেন। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল কাউন্টার। এরপর সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষার পরও মনসুর ও চালক এরশাদের দেখা মিলল না। এর মধ্যে আরো অন্তত ১৫ জন যাত্রী এলেন। শাহবাগ ও পল্টন রুটে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন তারা। কিন্তু বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন।
মনসুরের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি প্রায় প্রতিদিন এমন কাজ করে থাকেন। তাকে কোনোভাবে নগর পরিবহনের নিয়ম মানানো যায় না। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। খেয়াল খুশিমতো গাড়ি ছাড়েন ও বন্ধ রাখেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে তার এক সহকর্মী বলেন, মনসুর কারো কথাই শোনে না। ইচ্ছে হলে ডিউটি করে, আবার করে না। প্রতিদিন দুই একটি ট্রিপ মেরে বাস বন্ধ রেখে বিশ্রামে চলে যায়। তার কারণে বিব্রত কাউন্টারের কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে আমরা তাকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু সে আমাদের কথা শোনে না।
জাহাঙ্গীর নামে আরেকজনের নামে অভিযোগ- তিনিও বেপরোয়া, মনসুরের মতোই। এই দুজনের বিরুদ্ধে কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কেন পারেন না তা তারা বলেননি। এমতাবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হচ্ছে না। জাহাঙ্গীর প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই বাস এনে কাউন্টারে পার্কিং করে রেখে দেন। ওই সময়টুকুতে অনেক যাত্রী এলেও তিনি বাস বের করেন না। মনসুর-জাহাঙ্গীরের এমন আচরণে ঘাটারচর কাউন্টার থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা প্রায় বিপাকে পড়ছেন।
বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকেই ফোন করা হয় ঢাকা নগর পরিবহনের পরিচালক ধ্রুব আলমকে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে অবশ্যই মনসুর ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রী এমন ভোগান্তিতে পড়েছে প্রমাণ হলে তার চাকরিটাও চলে যেতে পারে। আমরা দেশের এই পরিস্থিতিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছি যাত্রীদের সেবা দিতে।
এমআইকে