মোস্তফা ইমরুল কায়েস
২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৪ পিএম
দেশের বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি আদায়ে ডাকা হরতাল ও অবরোধে জনমনে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরুর আগের দিন থেকে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন জ্বালাও পোড়াও করা হচ্ছে। ফলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। কিন্তু এর মাঝেও চলছে দূরপাল্লার যানবাহন। কিভাবে চলছে সেগুলো! তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে।
তারা বলছেন, ঢাকা থেকে যেসব গাড়ি বিভিন্ন জেলায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে সেগুলোতে পুলিশি প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে একসঙ্গে কয়েকটি গাড়ি বের হচ্ছে ঢাকা থেকে। পাশাপাশি পণ্য ও মালামালবাহী অন্য যানবাহনগুলোও টহলের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা পুলিশকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক প্রতিটি জেলার পরিবহন নেতারা কবে কোথায় কতটি বাস চলাচল করবে এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করছেন। সেই অনুযায়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সেই বাসগুলোকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পুলিশ সদস্য ও টহল টিম দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাস ছাড়ার আগে সন্দেহভাজন যাত্রী ও কোনো কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে দ্রুত তা পুলিশের ঊর্ধ্বতনকে জানানো হচ্ছে। ফলে জেলাগুলোতে এখন আর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না।
র্যাবের তথ্য মতে, তাদের প্রতিদিন দুই শতাধিক টহল ও স্কট টিম শুধুমাত্র তেলের লড়ি এবং পণ্যবাহী যানবাহন অন্য জেলায় পৌঁছে দিতে চালক-মালিকদের সহায়তা করছে। বাহিনীটির সদস্যরা গত ২৮ অক্টোবর থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কারণে পণ্যবাহী যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা তেমন ঘটেনি বলেই জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ ২০৮ টিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যানবাহনের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। বেশিরভাগ গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায়। ঢাকার বাইরে কম হলেও আতঙ্ক বেশি ছিল। ঢাকা জেলায় বেশি পুড়েছে যাত্রীবাহী বাস। যদিও এখন পর্যন্ত আগুনে পুড়ে কোনো যাত্রী বা জনগণ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের পর বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা যে হারে বেড়েছিল তা কমে এসেছে। চলতি মাসে বাসে আগুন দেওয়ার সময় মিরপুর, কমলাপুর এবং পুরান ঢাকায় হাতেনাতে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা ঘুরে ফিরে পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। আর এসব যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য তাদেরকে একটি পক্ষ নিয়োজিত করেছিল। এর বিনিময়ে তাদের দেওয়া হতো টাকা। এই বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুজন চালকও রয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন থানা পুলিশের সদস্যরা বলছেন, গ্রেফতার অভিযান চালানোর পর বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা কমেছে। পুরো শহরে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনাকারী ব্যক্তিরা হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র এ বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য পুলিশের আলাদা টিমও গঠন করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিটি যানবাহনে যাত্রী ওঠার আগে ও পরে যাত্রীদের ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী তোলার আগে কাউন্টারে প্রতিটি যাত্রীর ছবি তুলে রাখছেন বাস সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি কাউন্টার ছাড়া মাঝপথে কোনো যাত্রী না তোলার জন্য কড়াকড়িভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাসের মালিক এবং কর্মচারীরা এসব নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মানছেন। এরপরও গত কয়েকদিনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সরকারের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা মিটিং করেছেন। সেখানে প্রতিটি বাস মালিককে অভয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো বাসের ক্ষতি হলে সেটির ক্ষতিপূরণ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহন নেতারা। এসবের পাশাপাশি ঢাকা জেলা থেকে দূরের বিভিন্ন জেলায় যাত্রী পরিবহনকারী বাসগুলো যাতে নিরাপদে ঢাকা ছাড়তে পারে সেই ব্যবস্থাও করছে পুলিশ। মহাসড়কের পুলিশের টহল বৃদ্ধি এবং পাঁচ থেকে সাতটি দূরপাল্লার বাস একসাথে রওনা হওয়ার নিয়মও চালু হয়েছে। এসব বাস চলাচলের সময় পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আগের তুলনায় বাস মালিক ও চালকদের আতঙ্ক কমেছে।
সম্প্রতি পুলিশের আইজিপির সঙ্গে পরিবহন নেতারা মিটিং করেছেন। সেখানে তাদেরকে জানানো হয়েছে তারা একসঙ্গে কয়েকটি গাড়ি ছাড়তে চাইলে পুলিশি প্রটেকশন দেবে প্রশাসন। তবে বিষয়টি আগেভাগে পুলিশকে জানাতে হবে। কোন রুটে সে গাড়িগুলো যাবে সে অনুযায়ী পুলিশ স্কট দেবে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে যেসব বাস যমুনা সেতু হয়ে বগুড়া জেলায় ঢুকছে সেগুলোকে মাঝপথে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। তারা প্রতিটি বাসকে বগুড়া এলাকায় ঢুকিয়ে দিয়ে আবার পরের বাসগুলোকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এভাবে আবার বগুড়া থেকে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য একই কাজ করছে পুলিশ। এর ফলে দূরপাল্লার বাসগুলোতে আগুন দেওয়ার ঘটনা কম এসেছে।
আরও পড়ুন
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মহিদ উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা আগের থেকে কমে এসেছে। আমরা পুলিশি টহল বাড়িয়েছি। এছাড়াও যারা বাসে ছদ্মবেশে উঠে আগুন দিতো তাদের অধিকাংশ গ্রেফতার হওয়ার ফলে অনাকাঙ্খিত ঘটনার ঘটছে না। যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমরা পরিবহন মালিকদের বলেছি গাড়ির নিরাপত্তায় যেকোনো ধরনের এসকর্ট প্রয়োজন হলে আমরা দিতে রাজি আছি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে পুলিশ আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। একসঙ্গে পাঁচ সাতটি গাড়ি ঢাকা থেকে বের হতে চাইলে তারা পুলিশি এসকর্ট দিচ্ছে। ফলে নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে।
এমআইকে/এমএইচএম