images

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে দিনভর আলোচনা, ফলাফল ‘শূন্য’

জেলা প্রতিনিধি

৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৯ পিএম

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশে ফেরাতে আলোচনার জন্য এসেছিল মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। দিনভর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার পরও ফলাফল শূন্য। কারণ সহজেই নিজ দেশে যেতে চাইছে না নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, মিয়ানমার তাদের সঙ্গে টালবাহানা করছে। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলও তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়নি। তাই কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ফিরে গেছে মিয়ানমারের ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।

দিনভর আলোচনা শেষে বিকেলে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যায়।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সামনে শুধুই অন্ধকার!

মাইনুল কবির বলেন, এর আগে চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল দুইবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। এসময় তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধি) রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে (মিয়ানমার) যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। আজকেও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, কোন গ্রামে কে যাবে, কীভাবে যাবে। এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।

Rohingya2

তবে রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে মন্তব্য করে মাইনুল কবির বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু এখান  থেকে যাওয়াই নয়, যাওয়ার পরও যেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে এবং প্রত্যাবাসনটাও যেন টেকসই ও স্থায়ী হয়, সেজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার প্রচেষ্টা চলছে।

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সবধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, বাড়ছে উদ্বেগ

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়া জেটিঘাট দিয়ে পৌঁছায় মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের এই প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউজ এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমার ফিরে গেছে।

বুধবারও (১ নভেম্বর) রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফ আসবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিনিধি দলটি দুই দলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এই আলোচনা চলছে।

আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজ ভিটেমাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা। আর দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Rohingya3

শরণার্থী কমিশনার বলেন, জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। আমরা জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে- এই জন্য বাংলাদেশ সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যেসব প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

এর আগে চলতি বছর দুইবার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা এসেছিল। এরইমধ্যে গত ৫ মে বাংলাদেশের সাত সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিল।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বিশাল এই জনগোষ্ঠী এখন বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা।

প্রতিনিধি/জেবি