images

জাতীয়

‘ঢাকা গেট’ ফিরছে স্বরূপে, বসানো হবে কামান

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম

•  নভেম্বরের মধ্যেই সংস্কার শেষে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে
•  দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে নান্দনিক চত্বর
•  ওসমানী উদ্যান থেকে এনে বসানো হবে মীর জুমলার কামান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল পেরিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির দিকে এগোতেই চোখে পড়বে মোগল আমলের নান্দনিক স্থাপত্য মীর জুমলা ফটক বা ঢাকা গেট। ইন্টারনেটে ঢাকা গেটের পুরনো একটি ছবি দেখা যায়— একটি গেটের সামনে একদল হাতি, পেছনে সবুজ গাছপালা, মন্দিরের একটি চূড়া। ছবিটির উৎস বা সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বহু বছরের অযত্ন-অবহেলায় ঢাকার একসময়কার অবিচ্ছেদ্য অংশ ঢাকা গেটের নান্দনিকতা যে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুছে যেতে থাকে এর শেষ চিহ্নটুকুও। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে নান্দনিক রূপে ফেরাতে এটির সংস্কার কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই সংস্কার কাজ শেষে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে ‘ঢাকা গেট’।

Dhaka-Gate5

‘ঢাকা গেট’ কবে কে নির্মাণ করেছিলেন, তা নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষ-এ বলা হয়েছে, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে বাংলার সুবাদার মীর জুমলা ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এটি নির্মাণ করেছিলেন।

Dhaka-Gate1

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৮৩০ সালের দিকে এটি রমনা গেট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন মীর জুমলা যখন আসাম অভিযান করেন তখন এই জায়গা থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন। তাই এটাকে মীর জুমলা গেটও বলা হয়।

সম্প্রতি ঢাকা শহরকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। তারই অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক ‘মীর জুমলা গেট’ বা ‘ঢাকা গেট’কে নান্দনিকতায় ফেরাতে গত ২৪ মে সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

 

আরও পড়ুন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সবাই ডাক্তার’, বাড়াচ্ছে ঝুঁকি

দেশের প্রখ্যাত স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ গেটটির নতুন নকশা তৈরি করেন। সেই নকশার আদলেই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। সংস্কারের পর সেখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য নান্দনিক চত্বরও থাকবে। ওসমানী উদ্যান থেকে মীর জুমলার কামানও নতুন করে এনে স্থাপন করা হবে।

 

Dhaka-Gate2

আবু সাঈদ বলেন, ঢাকা গেটকে মীর জুমলার গেট বলা হলেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ মেলে। এই গেটের এখন তিনটি অংশ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে এমনটি ছিল না। শুরুতে রাস্তাটি এক লেনের হওয়ায় গেটের দুটি অংশ ছিল। পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে রাস্তাটি যখন দুই লেন করা হয় তখন এর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়। তিন নেতার মাজারের অংশটি নতুন করে তৈরি করা হয়। দুই রাস্তার মাঝের পিলারটি সেই ভাঙা অংশেরই একটি।

তিনি বলেন, আদি যে চুন-সুরকির প্লাস্টার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল, সেই একই উপকরণ দিয়ে আমরা এটি সংস্কার করছি। আদি ডয়লির অংশ এবং ষাটের দশকের অংশটিও থাকবে।

Dhaka-Gate4

‘ঢাকা গেট’ সংস্কার করতে সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৭১ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত আছেন ১২ জন। এর আগে ৩ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চি সাইজের ইট দিয়ে গেটটি সংস্কার করা হয়েছিল। মুঘল আমলে গেটটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল দেড় ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি সাইজের ইট। এই স্থাপনায় ৬টি পিলার রয়েছে, যার মধ্যে একটি পিলার বাদে বাকিগুলো প্লাস্টার করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন

প্রশান্তির বৃষ্টিতে ঢাকায় কেন ভোগান্তি?

প্রধান কারিগর মোহাম্মদ মোসলেম বলেন, একটি পিলারে শুধু প্লাস্টার বাদ রাখা হবে যাতে করে লোকে আসল ইটগুলো দেখতে পারে এবং বুঝতে পারে যে মোগল আমলে গেটটা দেখতে কেমন ছিল। আমরা প্রচলিত উপাদান চুন, সুরকি ইত্যাদি দিয়ে পিলারের আশপাশে যে ক্ষতি হয়েছে ওই জায়গাগুলো ঠিক করব।

 

Dhaka-Gate3

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ৫০ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। এগুলো সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত না হলে ঢাকা শহরের প্রাণ থাকে না। বর্তমান মেয়র ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছেন। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই এখন ঢাকা গেট ও নর্থব্রুক গেট সংরক্ষণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ঢাকা গেট দেখে সাধারণ মানুষ ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, ঐতিহাসিক ফটকটির নতুন নকশা অনুযায়ী দুই দিকের ফটকের দুটি স্তম্ভের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। মাঝখানে আরেকটি স্তম্ভ এবং দুই ফটকের পাশের চত্বরের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

ডিএইচডি/জেএম