images

জাতীয়

মন্ত্রীকে জড়িয়ে বক্তব্যই কি কাল হলো নদী কমিশন চেয়ারম্যানের?

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন

১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানান পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় ছিলেন। সবশেষ এক সেমিনারে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদী দখলের পেছনে একজন নারী মন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নদী কমিশনের চেয়ারম্যান। এই বক্তব্যের দুদিন পরই গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘হুমকি’ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মঞ্জুর আহমেদ।

হুমকি কিংবা আলোচনার মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হলো নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে। বুধবার (১৮ অক্টোবর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান গণমাধ্যমকে অপসারণের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা আজ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। সেই হিসাবে এই পদে তার ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করায় এক বছরের বেশি সময় আগেই তাকে এই পদ ছাড়তে হচ্ছে।

কেন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি বাতিল— জানতে চাইলে ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে জানান, কেন করা হয়েছে আমি জানি না। সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছিল, সরকারই বাতিল করছে। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। 

সম্প্রতি এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে কথা বলায় বাতিল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মঞ্জুর বলেন, সেটা আমি বলব না যে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলার জন্য। যদি আপনারা (গণমাধ্যমকর্মীরা) মনে করেন মনে করতে পারেন। আমি এটার সাথে লিংক করতে চাই না। 

মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলা কথা থেকে সরে আসবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কথা আমি বলেছি, তা থেকে এক চুলও আমি সরবো না। বলেছি, মন্ত্রী এর সাথে জড়িত। এসব কিছু আমি দুদকে পাঠাব।

>> আরও পড়ুন:
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণ
‘মেঘনায় বালু সন্ত্রাসীদের পেছনে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী’

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে এক সেমিনারে সদ্য বিদায়ী জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেঘনায় ইলিশসহ অনেক মাছের শ্রেষ্ঠ অভয়ারণ্য। সেখানে একটা বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ২শ কোটি সিআরটি বালু তোলা হবে। সেখানে আবারও ড্রেজার ও ট্রপেলারের আওয়াজে নষ্ট হচ্ছে এসব মাছের উৎস। এ নদী হায়েনার দল থেকে নদী রক্ষা কমিশন মুক্ত রাখতে পারছে না। কারণ এ হায়েনার দলের পেছনে আছেন একজন রাজনৈতিক শক্তি। আছেন চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী। তিনি তাদের রক্ষা করেন।

তিনি বলেন, সেখানকার প্রান্তিক জনগণ রাতে ঘুমাতে পারতেন না নদী ভাঙনের ভয়ে। আবারও তাদের সেই ভয়ের দিন আসছে। গত বছর (২০২২ সালে) এই হায়েনারা ৬৬৮ কোটি সিআরটি বালু চুরি করেছে। যা টাকায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। অথচ তাকে বলা হচ্ছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার জেরে (চাঁদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে) ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে।

ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেঘনা নদীর বালু সন্ত্রাসীদের ৩০০ ড্রেজার উৎখাত করেছি। কিন্তু এ অভিযানে জড়িত জেলা প্রশাসক খাদেমুলকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসী মেধাবি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা যখন কাজ করতে যায় রাষ্ট্রের সম্পত্তি জনগণের সম্পত্তি রক্ষায়- তাদেরকে পুরস্কারের পরিবর্তে তিরস্কার করা হয়। যার ফল আজ অবারও মেঘনায় বালু দস্যুরা ফিরে আসছে।

বাংলাদেশের নদীগুলো হায়েনারা দখল করে ফেলছে জানিয়ে ড. মঞ্জুর বলেন, এ দখলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি, প্রশাসনিক শক্তি, কিছু কিছু এনজিও কর্মী শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের নদী রক্ষা কমিশনের পাশে কেউ নাই। আমাদের যেসব দক্ষ অফিসার নদী রক্ষায় শক্ত অবস্থানে যায়- তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

ডিএইচডি/এএস