নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম
দুর্নীতির সুবিধার্থে বড় বড় মেগা প্রকল্প করেছে এ সরকার, কিন্তু গরিবের জন্য কিছুই করেনি। বিএনপির নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরে বসে যারা বলেন দরিদ্রের জন্য কিছু করিনি, যখন ৪১ ভাগ ছিল দারিদ্র্য, তখন তারা (বিএনপি) ছিলেন ক্ষমতায়, গরিবের জন্য কী করেছেন? আর আমরা ক্ষমতায় এসে সেটা ১৮ ভাগের নিচে নামিয়েছি।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ২ কোটি ৫০ লাখ দুস্থদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ) দিয়েছি। ৩৩ লাখ মানুষকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) দিয়েছি। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা)/ কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ২৮ লাখ জনকে দিয়েছি। ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস)-এ ৪৫ লাখ জনকে খাদ্য দিয়েছি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬৩ লাখ মানুষকে খাদ্য দিয়েছি।
তিনি বলেন, বয়স্কভাতা কার্যক্রমে ৫৭ লাখ লোক উপকারভোগী। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রমে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন উপকার পেয়েছে। ২৪ লাখ প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচিতে ১ কোটি ৪০ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দিয়েছি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসা শিক্ষা স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি ৫৭ লাখ জনকে দিয়েছি।
তিনি স্বীকার করে বলেন, এখন করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তাই দ্রব্যমূল্য একটু বেশি। মানুষের কষ্ট হচ্ছে, আমরা বুঝি।
‘ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদের সতর্ক হতে হবে’
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদের সতর্ক হতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, এটি খুবই দুঃজনক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের যতক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত হবে না। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে, নিজের চারদিকে পানি জমে থাকে, ময়লা ফেলে রাখে। নাগরিকের নিজেরও দায়িত্ব আছে। তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: লিখিত বক্তব্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, এখন মশারি না টানানো ফ্যাশন হয়ে গেছে। নিয়মিত মশারি টানাতে হবে। বাড়ি থেকে গেলে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে যেতে হবে। নিজেদের সচেতন করতে হবে। শুধু কমিটি করে দিলেই কাজ হবে না।
‘যেসব প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদের দেওয়া হবে মনোনয়ন’
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন কোন বিবেচনায় দেওয়া হবে তা জানিয়েছে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারো পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা প্রপার সচেতন বলে নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছেন, জনগণের আস্থা, বিশ্বাস কতটুকু অর্জন করেছেন, আমরা সেটাকেই বিবেচনা নিই। সেটা বিবেচনায় নিই বলে আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করত, তাহলে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হতো না।
তিনি বলেন, কতগুলো দুর্যোগ এসেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মী, অনেক সংসদ সদস্য মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ সম্পৃক্ত ও দল সুসংগঠিত না হলে কোনো সমস্যা মোকাবিলা কঠিন হয়ে যায়। আমরা পারি শুধু একটাই কারণে– আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ। যখনই মানুষের জন্য ডাক দিয়েছি তারা ছুটে গেছে মানুষের কাছে।
‘শুধু নিজে পয়সা কামালে হবে না, সাংবাদিকদেরও দেখতে হবে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের (সাংবাদিকদের) ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের।
তিনি বলেন, মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত।
>> আরও পড়ুন: বিএনপির মিথ্যাচার সম্পর্কে সচেতন থাকুন, দেশবাসীকে শেখ হাসিনা
সরকারপ্রধান বলেন, আমি ৯৬ সালে সরকারে এসে আজকের টেলিভিশন রেডিওসহ সব বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেই। উন্মুক্ত করেছি বলেই শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী, সাহিত্যিক, টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছে। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকদের মধ্যে অনেকে এখানে বসেও আছে, এটা তো তাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদেরকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের। মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত।
সরকারপ্রধান বলেন, এখানে যারা মালিক তাদেরকে আমি বলব, ওয়েজবোর্ড কার্যকর করে দিয়েন। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, কাজ করে। তাদের ভালো-মন্দ দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ-পর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
দেশ দুটিতে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
/এএস