images

জাতীয়

স্টার লাইনের খাবার কি ফেনীর ইউনিক পণ্য?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৭ এএম

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভেল। এই ফেস্টিভেলে মূলত বিভিন্ন জেলার ইউনিক পণ্যগুলোকে ব্র্যান্ডিং করার লক্ষ্যেই আয়োজন। সে অনুযায়ী জেলাগুলো থেকে ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং বাহারী পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছে উদ্যোক্তারা। কিন্তু এই ফেস্টিভেলে ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া দুটি স্টলের একটিতে স্টার লাইন নামে একটি কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন পণ্য ও খাবারকে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ফেনী জেলার ঐতিহ্যবাহী ও ইউনিক পণ্য কি স্টার লাইনের খাবার?

বুধবার বিকেলে সরেজমিনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হঠাৎ জেলা প্রশাসনের স্টলে এমন একটি কোম্পানির তৈরিকৃত খাবারের পশরা সাজিয়ে তা প্রদর্শণ বিক্রিতে অবাক হয়েছেন ফেস্টিভেলে আগত দর্শনার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলাকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর এটি দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ফ্রিতে। তবে ফেস্টিভেলে ফেনী জেলা প্রশাসনের দুটি স্টল ছাড়া আর কোন জেলার এমন স্টল খুজে পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য জেলা থেকে আসা স্টলগুলোতে সেসব জেলার খাবার, পণ্য ও ঐতিহ্যবাহী জিনিসের পশরা সাজানো হয়েছে ও বিক্রিও চলছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ফেনী জেলা প্রশাসনের দুটি স্টল। তাদের দুটির একটিতে স্টার লাইনের তৈরী বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার, স্টার লাইন গ্রুপের হোটেল বেস্ট ইন এট ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। দুই স্টলে ছয়জন কর্মী কাজ করছেন। আরেকটিতে ব্রান্ডিং করা হচ্ছে কাজী লেদার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরী বিভিন্ন চামড়ার পণ্য। 

স্টার লাইনের তৈরী পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, চকলেট, টোস্ট,  চানাচুর, ডালভাজা, মিল্ক বিস্কুট, টমেটো সস, পাউরুটি, স্টার লাইনের হোটেল বেস্ট ইনের লিফলেট, তাদের পরিবহন স্টার লাইনের ছবি সাটানো হয়েছে। আর এক কোনায় রাখা হয়েছে সুপারীর গাছের ছালের তৈরি বিভিন্ন বাটি ও প্লেট। তবে সেটি স্টার লাইনের পণ্যের ভীড়ে লুকিয়ে থাকা অবস্থা।  

স্টার লাইনের পণ্যকে ব্র্যান্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা হোটেল বেস্ট ইনের অপারেশন ম্যানেজার ঢাকা মেইলকে বলেন, তারা মুলত স্টলটি পেয়েছেন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে। তার দাবি, তারা তাদের পণ্যগুলো সেই জেলায় তৈরি বলে স্টলে রেখেছেন। তবে তারা পণ্যের পাশাপাশি ফেনীর পর্যটনের একটি বই রেখে পর্যটনকে ব্র্যান্ডিং করছেন। 

অন্যদিকে আরেক স্টলে থাকা কাজী লেদার স্টোরের মালিক কাজী জামাল উদ্দিন ঢাকা মেইলকে জানান, তারা স্টল চাওয়ার জন্য আবেদন করার সময় পাননি। তাই জেলার নামে এসেছেন। আর এর বিনিময়ে জেলা প্রশাসনকে তাকে কিছু দিতে হয়নি।

তাদের সাথে কথা বলার সময় এক নারী দর্শনার্থী সেখানে আসেন এবং জেলা প্রশাসনের নামে দুই স্টলে এসব পণ্য দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। এ সময় তিনি স্টার লাইনের পণ্য দেখে বলতে থাকেন, এগুলো কি ফেনী জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য? তার জবাবে স্টলে থাকা এক যুবক বলে উঠলেন- না, এগুলো স্টার লাইন এর পণ্য। তখন তিনি বললেন, এটা কেমন কথা ফেনী জেলার অনেক ঐতিহ্যবাহী পণ্য আছে কিন্তু তাই বলে কি স্টার লাইন এর পণ্য ব্যান্ডিং করতে হবে? এই বলে সেই নারী অন্য স্টলে চলে যান। 

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক শাহিনা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, স্টার লাইন এর পণ্য ব্র্যান্ডিং করা হবে এমন উদ্দেশ্যে সেখানে স্টল দেওয়া হয়নি। এছাড়াও সেখানে কাজী নেদার নামে একটি কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ইউনিট পণ্য রাখা হয়েছে। তবে আমরা ফেনী জেলার মহিষের দই আজ রাখতে চেয়েছিলাম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সেটা ভোরে পাঠাতে হবে। এ কারণে সম্ভব হয়নি। তবে আগামীকাল থেকে দই স্টলে রাখা হবে। এছাড়াও সুপারির গাছের বাকলের তৈরি পণ্য রাখা হয়েছে।

এ সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় ফেনী জেলার স্টলে রাখা স্টার লাইনের খাবার গুলো কি ইউনিক পণ্য? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন হয়ে থাকলে বিষয়টি দেখছি। 

এছাড়াও এ বিষয়ে কথা বলা হয় বাংলাদেশ বোর্ডের সিইও আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের ঢাকা মেইলকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এমন হওয়ার তো কথা না। আমরা বিষয়টি দেখছি। 

আজ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ফেস্টিভেলের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনে ফেস্টিভেলে আগতরা অনেক খুশি।

মিরপুর থেকে আসা কাকলী রাণী বলছিলেন, আসলাম ফেনী জেলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দই খাওয়ার জন্য কিন্তু স্টলে গিয়ে দেখি স্টার লাইনের পণ্য। এটা কেমন কথা! প্রশাসন এটা কিভাবে করতে পারলো! তাদের কি একটুকুও দায়বদ্ধতা নেই। এটা লজ্জার। একটা জেলায় কি একটি ইউনিক পণ্যও তারা খুজে পেল না!

এমআইকে/একে