images

জাতীয়

ড্যাপ সংশোধন ঢাকার বাসযোগ্যতা সংকটে ফেলবে: আইপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম

শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়ে আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) দিয়ে রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০১৬-৩৫) সংশোধনের যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। 

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এসব বিষয় তুলে ধরে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, পরিকল্পনাবিদদের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়াই আবাসন ব্যবসায়ীসহ কতিপয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল ও পেশাজীবীর চাপে ড্যাপের এই সংশোধন বাসযোগ্য নগর গড়বার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই সংশোধনীটি এমন সময়ে চূড়ান্ত করা হলো, যখন অল্প কয়েকদিন আগেই কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতেই ঢাকা শহরে স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ঢাকার বাসযোগ্যতার সংকটের বিষয়টি আবারও সাধারণ জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়েই যানজট, বায়ু দূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় - প্রভৃতি কারণে ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্যতা একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে। 

ড্যাপ সংশোধনের পূর্বেই এলাকাভিত্তিক ও ব্লকভিত্তিক এফএআর (ফার) এর যে মান দেওয়া ছিল, পরিকল্পনার বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী তা এমনিতেই  অধিক ছিল। আমরা বার বার বলে এসেছি, নাগরিক সুবিধাদি, পরিসেবা ও  অবকাঠামোর বিবেচনায় ঢাকা শহর চারগুণেরও বেশি জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, ভবন ও অবকাঠামো ধারণ করে আছে। ফলে ঢাকাকে বাঁচাতে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ এর কোনো বিকল্প নেই। তাই পরিকল্পনা দলিল হিসেবে ড্যাপকে প্রকৃত অর্থে কার্যকর করতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো মহলের চাপোর বিপরীতে রাজউক ও সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তার কোনো বিকল্প ছিল না। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ২০১০ সালে প্রণীত ড্যাপের ভাগ্যই বরণ করতে যাচ্ছে এবারের ড্যাপ - স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শক্তিশালী মহলের কারণে যা ছিল অনেকটাই  অকার্যকর। 

 

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের মৎস্য খাতে সহযোগিতা ও বিনিয়োগে আগ্রহী জাপান

আইপিডি আরও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, আবাসন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি রাজউককে জরিমানা সাপেক্ষে অবৈধ ও বিচ্যুতি নিয়ে নির্মিত বহুতল ভবন বৈধ করবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে। অথচ রাজউকসহ সরকারি সকল সংস্থাসমুহের চোখের সামনেই এই সকল ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে। এই বিষয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের গাফিলতি, অবৈধ ভবনের মালিক কিংবা অবৈধ আবাসন প্রকল্পের মালিকের ব্যাপারে বিস্ময়করভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা। এভাবেই দিনে দিনে পরিকল্পনা, আইন ও মহাপরিকল্পনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঢাকাকে করা হচ্ছে চরমভাবে বসবাসের অযোগ্য। জনঘনত্ব,  উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত পরিকল্পনার মৌলিক কৌশলের সাথে আপোষ করলে ফ্লাইওভার-এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প করেও ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না। 

এই প্রেক্ষিতে ড্যাপ সংশোধন সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন বাতিলের জন্য আন্তরিকভাবে দাবি জানাচ্ছে আইপিডি। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট যেকোনো সংশোধন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের সাথে যথাযথ আলোচনাপূর্বক গ্রহণ করা উচিত। শুধুমাত্র অর্থ জরিমানা দিয়ে অবৈধ বহুতল ভবন বৈধ করবার উদ্যোগ মহাপরিকল্পনা এবং ইমারত ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে আরও অকার্যকর করবে। ব্যবসায়ী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের মুনাফা নয়, বরং রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দিতে হবে শহরের বাসযোগ্যতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সার্বিক জনকল্যাণ ও জনস্বাস্থ্য। শুধু ভবনের উচ্চতা সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়- ড্যাপে অনুমোদনহীন শিল্প কারখানা, নিয়ন্ত্রণহীন মিশ্র ব্যবহার, জলাশয়-জলাভূমির ব্যবহার, অবৈধ আবাসন প্রভৃতি বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই ড্যাপ সংশোধনের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে আইপিডি। 

ডিএইচডি/এমএইচএম