images

জাতীয়

‘মেঘনায় বালু সন্ত্রাসীদের পেছনে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৮ পিএম

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, মেঘনায় ইলিশসহ অনেক মাছের শ্রেষ্ঠ অভয়ারণ্য। সেখানে একটা বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ২শ কোটি সিআরটি বালু তোলা হবে। সেখানে আবারও ড্রেজার ও ট্রপেলারের আওয়াজে নষ্ট হচ্ছে এসব মাছের উৎস। এ নদী হায়েনার দল থেকে নদী রক্ষা কমিশন মুক্ত রাখতে পারছে না। কারণ এ হায়েনার দলের পেছনে আছেন একজন রাজনৈতিক শক্তি। আছেন চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী। তিনি তাদের রক্ষা করেন। 

তিনি বলেন, সেখানকার প্রান্তিক জনগণ রাতে ঘুমাতে পারতেন না নদী ভাঙনের ভয়ে। আবারও তাদের সেই ভয়ের দিন আসছে। গত বছর (২০২২ সালে) এই হায়েনারা ৬৬৮ কোটি সিআরটি বালু চুরি করেছে। যা টাকায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। অথচ তাকে বলা হচ্ছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার জেরে (চাঁদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে) ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে।  

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা বিষয়ে সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মার্গুব মোর্শেদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক প্রধান হাইড্রোলজিস্ট আখতারুজ্জামান তালুকদার।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেঘনা নদীর বালু সন্ত্রাসীদের ৩০০ ড্রেজার উৎখাত করেছি। কিন্তু এ অভিযানে জড়িত জেলা প্রশাসক খাদেমুলকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসী মেধাবী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা যখন কাজ করতে যায় রাষ্ট্রের সম্পত্তি জনগণের সম্পত্তি রক্ষায়- তাদেরকে পুরষ্কারের পরিবর্তে তিরস্কার করা হয়। যার ফল আজ অবারও মেঘনায় বালু দস্যুরা ফিরে আসছে।

বাংলাদেশের নদীগুলো হায়েনারা দখল করে ফেলছে জানিয়ে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ দখলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি, প্রশাসনিক শক্তি, কিছু কিছু এনজিও কর্মী শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের নদী রক্ষা কমিশনের পাশে কেউ নাই। আমাদের যেসব দক্ষ অফিসার নদী রক্ষায় শক্ত অবস্থানে যায়- তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

Nodi_new
বাংলাদেশের নদ-নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা বিষয়ে সেমিনার।

তিনি আরও বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী দূষণমুক্ত করতে চেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর গত জন্মদিনের মধ্যে। গত এক বছরের মধ্যে। আমার ধারণা ছিল- এটা প্রশাসনেরও দায়িত্ব, তারা এটা পালন করবেন। ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছিলাম মন্ত্রণালয়ের কাছে, তারা তা দেয়নি। চিঠি লিখেছি, টাকা চেয়েছি প্রচারণার জন্য তা হয়নি।

পরিবেশ অধিদফতরকে উদ্দেশ্য করে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের ওপর দায়িত্ব ছিল ঢাকার চারটা নদীকে রক্ষা করা। কিছুটা দখল মুক্ত করা গেছে। কিন্তু দূষণমুক্ত করা যায়নি। দূষণ আরও বেড়েছে, যার দায়িত্ব ছিল পরিবেশ অধিদফতরের। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের একটা রায় ছিল- শীতলক্ষা, তুরাগ, বালু এবং বুড়িগঙ্গা নদীকে ক্রিটিকাল হিসেবে ঘোষণা করার জন্য বলা হয়েছিল, তারা তা করেনি। যার মানে হচ্ছে পরিবেশগতভাবে সংঙ্কটাপন্ন। ঠিক পরিবেশগতভাবে আইসিইউতে যাওয়ার মতো অবস্থা। আজকে দেখা যাচ্ছে ঢাকার বৃহত্তর এলাকায় যে ১৮টা নদীকে ইসিআই হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলছি, এগুলোতে শীতকালে আর নদী থাকবে না। এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে না।

পদ্মা নদীর বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মানিকগঞ্জ, হরিরামপুর গিয়ে দেখেছি তিনটা বালু সন্ত্রসী গ্রুপ। তারা পদ্মা নদী কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। সেখানকার যারা সাহসী কর্মকর্তারা বাধা দিচ্ছে- তাদের হাইজ্যাক করে নিয়ে যাচ্ছে। নৌ পুলিশের এক ওসিকে তারা বন্ধী করে রাখছে।

কর্ণফুলীর বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন- আজ ভয়াবহ অবস্থা। কর্ণফুলীকে টুকরা টুকরা করে লিজের নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বোর্ড অথরিটি, নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসক এর সাথে জড়িত। যুক্ত আছে চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ নদীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা চট্টগ্রামে একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছে। যেখানে সম্পূর্ণভাবে নদী এবং সিএস অনুযায়ী। তরা লিজও দিয়ে দিয়েছে। তারা নদীর ওপর অত্যাচার করছে, নদীকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তারা এখন বিভিন্ন কোম্পানিকে লিজ দিয়েছে। কর্নফুলী নদী শুধু পরিবেশগতভাবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদীর কাগজপত্র দিলেও মন্ত্রণালয় বলছে এটা নদীর অংশ না।

ডিএইচডি/এমএইচএম