মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৩ এএম
ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন হামিদুর রহমান। গায়ে রেইনকোট তো দূরের কথা, পলিথিনও নেই। কাক ভেজা হয়ে চুপসে যাওয়ার মতো অবস্থা তার। কিন্তু হামিদুরের সেসব ভাবার সময় নেই। বৃষ্টির মধ্যেই একের পর এক ট্রিপ মেরে যাচ্ছেন। যাত্রী পেলেই রিকশায় তুলছেন। কারণ, যে করেই হোক সন্ধার মধ্যেই ৫০০ টাকার ভাড়া মারতে হবে। কারণ দিনাজপুরে গ্রামের বাড়িতে ৫০০ টাকা পাঠাতে হবে যেটা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হবে।
হামিদুর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি জানালেন, স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তিনি একাই রোজগার করেন। থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবরে। পরিবারের প্রয়োজনে কিছু টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। তাই রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান যাই আসুক, প্রতিদিন তাকে কিস্তির জন্য আলাদা টাকা পাঠাতে হয়। আর যা রোজগার হয় তা দিয়ে নিজে চলতে হয়, পরিবারকেও চালাতে হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমারে ৫০০ টাকা কিস্তি দেওন লাগে। আইজকা অহনো কিস্তির টাকা ম্যানেজ অয় নাই। যেমনেই হোক সন্ধ্যার মইধ্যেই ৫০০ টাকার ভাড়া মারতে অইব। কিস্তি তো আর রোদ-বৃষ্টি বোঝে না।’
শুধু রিকশাচালক হামিদুর রহমানই নয়। বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীর বেশ কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। হাজারীবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রংপুরের গঙ্গাচরার সবুজ মিয়া। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে হাফেজি মাদরাসায় পড়ছে। এছাড়া এক মেয়ে ক্লাস ফাইভে, এক মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ছে। সবুজ মিয়ার একার আয়েই চলে পাঁচজনের সংসার। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় চার হাজার টাকা। তবে ছেলে হাফেজি পড়ার কারণে বাড়িওয়ালা তাকে ৫০০ টাকা ছাড় দেন। এছাড়া প্রতিদিন রিকশা ভাড়া দিতে হয় ১৩০ টাকা। রিকশা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ৬০০-৮০০ টাকা ঘরে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তাকেও প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। বড় মেয়ের বিয়ের সময় এই ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে হলেও ঋণ পরিশোধের চিন্তা আগে রাখতে হয় মাথায়।
সবুজ মিয়া বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে সংসার চালাতে। কোনোরকমে ডাইল-ভাত খেয়ে দিন যাচ্ছে। আগে বিড়ি-সিগারেট খাইতাম। অহন সেইডাও ছাইড়া দিছি। বড় মাইয়াটারে বিয়া দেওয়ার সময় টাকা ঋণ করেছিলাম। প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হচ্ছে। আরও তিনটা পোলা মাইয়া পড়াশোনা করতাছে। আগের থেইকা আমাদের আয় কইমা গেছে। ঢাকা শহরে ড্রাইভার (রিকশাচালক) বেশি হয়ে গেছে। এতে আয় কমে গেছে। সবকিছুরই দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষের কাছে ১০ টাকা ভাড়া বেশি চাইলে ধমক শোনা লাগে।
রাজধানীর মুগদা এলাকার রিকশাচালক মোমিনুল বলেন, সবকিছুর যখন দাম বাইড়া গেছে, আমাদের ইনকাম তখন কইমা গেছে। আগে রিকশা ভাড়া দিতাম ৭০-৮০ টাকা। অহন সেইখানে ১৩০ টাকা দেওয়া লাগতেছে। মেসে প্রতিদিন থাকা-খাওয়ার খরচ দিতে হয় ১৭০ টাকা। রিকশা ভাড়া-মেসের ভাড়া দিয়া কোনোরকমে ৫-৬ হাজার টাকা থাকে। সেটা নিয়াই বাড়িতে যাই। কয়েকদিন থাইকা আবার ঢাকায় আসি। আগের থাইকা অহন কামাই অনেক কম হয়। আগে দিনে হাজার-বারশ টাকা কামাই হইতো, অহন সাত-আটশ টাকা কামাইতে ঘাম ছুইটা যায়।
টিএই