নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৪ পিএম
দোকান ভর্তি ছিল মালামাল। থরে থরে সাজানো। ক্রেতার পছন্দ মতো ছিল নাকফুল, আংটি, গলার চেইন, নেকলেস, নূপুর। এসব গহনার কোনোটা স্বর্ণের, কোনোটা রূপার।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতের আগুনে পুড়েছে দোকান। ছাই-কয়লার সঙ্গে মিশে গেছে দামি গহনা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত দমকলবাহিনী তাদের কাজ করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর চলেছে নির্বাপণ ও ডাম্পিং কার্যক্রম।
এসময় কোটি টাকার সম্পদ চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ যেন বেশি।
মার্কেটের সামনের অংশে বেশ কয়েকটি জুয়েলারির দোকান। এসব দোকানিদের ভাষ্যমতে, আগুনের খবর পেয়ে তারা দ্রুতই দোকানে ছুটে আসেন। কেউ অল্প কিছু মালামাল বের করতে পেরেছেন, কেউবা কিছুই বের করতে পারেননি। চোখের সামনে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলতে দেখেছেন সাজানো দোকানে।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সব কিছু পাল্টে গেছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের বয়ানে উঠে এসেছে, একেকটি দোকানে এক থেকে দুই কোটি টাকার মালামাল ছিল। রক্ষা হয়েছে খুবই কম।
এবার ব্যবসায়ীরা চোখের পানি মুছে পরে মনোযোগ দিয়েছেন, যেটুকু সম্পদ অবশিষ্ট তা রক্ষায়। শুক্রবার সকালেও নিজেদের সম্পদ আহরণে ব্যস্ত তারা।
দোকানের মধ্যে কিছু অবশিষ্ট নেই। এবার যা আছে, সব ছাই-কয়লার মাঝে। তাই তো ছাই আর কয়লার মাঝ থেকে সম্পদ খুঁজছেন তারা।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কৃষি মার্কেটের জুয়েলারি দোকানের সামনে ছাই-কয়লার মাঝে কিছু খুঁজতে দেখা যায় এক যুবককে। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম আলী হোসেন। সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স তার ভাইর দোকান। এসেছেন সহযোগিতা করতে।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সব কিছু তো শেষ। এখন খুঁজতেছি এরমধ্যে কিছু পাওয়া যায় কিনা।’
তার সঙ্গে কাজে মনোযোগ দিয়েছেন একজন মাঝ বয়সী ব্যক্তি ও একজন শিশু। হাতে আতশি কাচ।
মাঝ বয়সী ব্যক্তি হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘এই ছাইয়ের, কয়লার দামই এখন কোটি টাকা। সব তো পুড়ে গেছে। কোনটা কয়লা, কোনটা কি, বোঝা যায় না। তারপরও চেষ্টা করতেছি।’
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের ডানদিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনে প্রায় ৪০০ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মার্কেট ও কাঁচাবাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৭০০-৮০০ দোকান ছিল।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া ছিল ৩১৭টি। এরমধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
কারই/এএস