images

জাতীয়

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা

খলিলুর রহমান

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৭ পিএম

ভয়াবহ আগুনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। দোকানে থাকা কোটি কোটি টাকার মালামাল মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে দিশেহারা এখানকার ব্যবসায়ীরা। কোনোক্রমেই থামছে না তাদের কান্না। তারপরও নিজের দোকানে এসে শেষ সম্বল খোঁজ করছেন অনেকেই। আবার অনেকেই দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় দোকানে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দোকান মেরামত করা শুরু করে করেছেন। আবার কেউ কেউ দোকানে জমে থাকা ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করছেন। শুধু তাই নয়, মার্কেটের ধ্বংসস্তুপ থেকে এখনো বের হচ্ছে ধোঁয়া। এছাড়া সেই এলাকায় বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো গত বুধবার রাতেও দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়েছিলেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরদিন ভোর রাতে হঠাৎ করেই ওই মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই আগুনে নিঃস্ব হয়ে যান শত ব্যবসায়ী। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
3

সুজন মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, মার্কেটে আমার একটি মুদির দোকান ছিল। আমার দোকান থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারি নাই। আমার মোট ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। 

তিনি বলেন, মার্কেট বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ভোর রাতে হঠাৎ করে কিভাবে আগুন লাগছে। সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন একটাই দাবি পুনরায় আমরা সেই জায়গায় ব্যবসা শুরু করতে চাই। বঙ্গবাজারের মতো যাতে না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে। 

জুয়েল আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার দোকনে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছু মালামাল বের করেছি। আর বাকিগুলো পুড়ে গেছে। এখন এসে দোকানে পুড়ে যাওয়া মালামালগুলো পরিস্কার করছি।

আমির হামজা বস্ত্র বিতানের মালিক মো. ফজলুল হক বলেন, লাখ দেড়েক টাকা ছিল দোকানে। ঋণ না থাকলেও বাকিতে আনা অনেক মালামাল ছিল দোকানে। পরশু দিনও ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকিতে ৪ লাখ টাকার মাল এনেছি। চার লাখের চার পয়সাও তো বেচতে পারিনি, সব পুড়ে গেল।
 
4
কমে দামে বিক্রি হচ্ছে পোড়া চাল

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া মার্কেটে এখন সব হারানো মানুষ আর্তনাদ করছে। ধ্বংসস্তূপে হাতড়ে বেড়াচ্ছে তারা। খুঁজে ফিরছে প্রয়োজনীয় কিছু অবশিষ্ট আছে কি না। তবে বেশ কয়েকটি চালের দোকান থেকে পুড়ে যাওয়া চাল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে কম দামে ওই চাল বিক্রিও করছেন বিক্রেতারা।

আব্দুর রহিম নামের এক চাল বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, আগুনে সব চাল পুড়ে গেছে। তবে কিছু চাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পোড়া গন্ধ ও পানিতে ভিজে চালগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কম দামে চাল বিক্রি করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, যে চালের বস্তা ২৫০০ টাকা বিক্রি করতাম সেই চালের বস্তা এখন ১০০০ হাজার বিক্রি করছি।

এদিকে, কম দামে চাল ক্রয় করার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

রহিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, চালের অনেক দাম। এখানে আগুনে পুড়ে যাওয়া চালগুলো কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে দেখে এখানে এসেছে। কিছু চাল ক্রয়ও করেছি।
 
2
তালিকা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের

কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের তালিকা করতে বুথ খুলেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন।
 
ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করব। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা করার চেষ্টা করব।
 
1
ধ্বংসস্তূপ পরির্দশন কৃষিমন্ত্রীর, সহায়তার আশ্বাস

আজ দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পরিদর্শন করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখেন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। 
 
তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দেখা হবে। তখন উনাকে বিষয়টি বিস্তারিত জানাব। খুব শিগগই সহযোগিতার বিষয়টি জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কাউকে দোকান থেকে উচ্ছেদ করা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি। 
 
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সেই সঙ্গে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইনস্পেক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর রাত পৌনে ৪টার দিকে কৃষি মার্কেটের ডানদিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। একপর্যায়ে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুনে প্রায় ৪০০ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মার্কেট ও কাঁচাবাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৭০০-৮০০ দোকান ছিল।
 
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া ছিল ৩১৭টি। এরমধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
 
কেআর/এএস