বোতলজাত পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্যাবের

দেশে বোতলজাত পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সেই সঙ্গে বোতলজাত সকল ধরনের পানির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক এবং ভোক্তা স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে চার দফ প্রস্তাব করেছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি পেশ করা হয়।

মানববন্ধনে ক্যাবের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, দেশে ডাব নিয়েও সিন্ডিকেট হচ্ছে। শুধু বাদ আছে জাম্বুরা আর আমড়া। আর এটা নিয়েও হয়তোবা হয়ে যাবে। কারণ যেহেতু ডাব, তেল, ডিম নিয়ে সিন্ডিকেট করে...। মনে হয় ক’দিন পর পুইশাক নিয়েও সিন্ডিকেট হয়ে যেতে পারে।

অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা শুধু সরকারকে দোষারোপ করতে চাই না। সরকার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না। সরকারের মন্ত্রী বলেছেন, আমরা আইন করে দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা মানে না। তাই মন্ত্রী মহোদয়কে বিনয়ের সাথে বলছি- আপনি যখন পারছেন না, তখন বিদায় নেন। এর জন্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির দরকার নাই। আপনি পদত্যাগ করুন, আমাদের ভোক্তাদের রেহাই দেন। 

পূর্বঘোষণা ছাড়াই পানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মানববন্ধনে বলা হয়, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ভীষণভাবে। মানুষ নানাভাবে বিপদগ্রস্ত। দেশে চলছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এমন সময় হঠাৎ করে বাজারে বোতলজাত পানির দাম বেড়ে গেছে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে বোতলজাত পানির দাম। বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতি বোতল পানির দাম বাড়িয়েছে।

 

খুচরা পর্যায়ে ৮ থেকে ৯টা বেশিতে পানি বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আধা লিটার পানির বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। হঠাৎ কেন পানির দাম এত বাড়ানো হয়েছে, এর কোনো সদুত্তর মিলছে না। বাজারে যেসব বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে পরিচিত ব্র্যান্ডের ৫০০ মিলি লিটার পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এখন ২০ টাকা। কয়েকদিন আগেও এসব ব্র্যান্ডের ৫০০ মিলি লিটার পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১৫ টাকা। যেখানে প্রতি ৫০০ মিলি লিটার বোতলজাত খাবার পানির পাইকারি মূল্য ১১ থেকে ১২ টাকা। অর্থাৎ ৫০০ মিলি লিটার পরিমাণের প্রতি বোতল পানি খুচরা পর্যায়ে ৮ থেকে ৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি।

তারা বলেন, ‘আমরা পত্রিকা মারফত এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সূত্রে জানতে পেরেছি, বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনাটি তাদের নজরে এসেছে। তারা এসব বিষয়ে তদন্ত করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও জানিয়েছে। আমাদের জানা আছে, দেশে পানির বাজার এখন হাজার কোটি টাকার। প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ কোটি লিটার বোতলজাত পানি বিক্রি হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বোতলজাত পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বড় বড় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই এখন পানির ব্যবসা রয়েছে।’ 

সাধারণ ভোক্তারা প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর সুফল পাচ্ছে না দাবি করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা জানি জনগণকে সুরক্ষা দিতে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ প্রণীত হয়েছে। এই আইনের লক্ষ্য হিসাবে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎসাহিত করিবার, নিশ্চিত ও বজায় রাখিবার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি ও ওলিগপলি অবস্থা, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; বিধায় প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ প্রণীত হয়েছে।’ কিন্তু আমরা সাধারণ ভোক্তারা এই আইনের সুফল পাচ্ছি না। সকল ধরণের বোতলজাত পানির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিও এরই ধারাবাহিকতা।

 

এ দিন মানববন্ধনে ক্যাবের পক্ষ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-

১) অবিলম্বে সকল ধরণের বোতলজাত পানির অযৌক্তিক, অন্যায়, অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধি বাতিল করতে হবে।

২) ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৩) বোতলজাত পানির মূল্য স্বাভাবিক করতে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় পদক্ষেপ দাবি করছি।

৪) যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যুথবদ্ধভাবে হঠাৎ করে বোতলজাত পানির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে ভোক্তাসাধারণকে কষ্টে ফেলেছে, তাদের আইনানুগ বিচার ও শাস্তি দাবি করছি।

মানববন্ধন কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন ক্যাবের কো-অর্ডিনেটর (রিসার্চ) শুভ কিবরিয়া। এতে অন্যদের মধ্যে ক্যাবেরে কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাবের রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা মামুন, ক্যাবের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর একরাম উল্লাহ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিএই/আইএইচ