খলিলুর রহমান
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ এএম
বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (ঢাকা উড়াল সড়ক) ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অপেক্ষার পালা শেষে রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। যান চলাচল চালুর দিনে উৎসব আর স্বস্তির যাত্রায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।
রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এলাকায় যাত্রী নিয়ে আসেন প্রাইভেটকার চালক মো. রুবেল মিয়া। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রথমবার ঢাকা উড়ালসড়কে গাড়ি নিয়ে আসছি; এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আগে যানজটে দীর্ঘ সময় নষ্ট হতো। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট আসতে কয়েক ঘণ্টা লাগতো। আজ মাত্র কয়েক মিনিটেই চলে আসছি। তাই পুরা ঈদ ঈদ লাগছে।
রুবেল মিয়া বলেন, আমি পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। নিয়মিত ঢাকা শহরে যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। বিশেষ করে বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের নিয়ে আমি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাই। তাই উড়ালসড়ক দিয়ে এখন নিয়মিত যাতায়াত করব। এতে সময়ও কম লাগবে এবং আয় বেশি করতে পারব।
সিলেট থেকে আসার রিপন চন্দ্র শীল ঢাকা মেইলকে বলেন, খুব ভালো লাগছে। প্রথম দিনেই উড়াল সেতুতে উঠতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। তাই সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় বিমানে যাতায়াত করি। উড়ালসড়ক হওয়াতে আমার জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে।
নোবেল নামের এক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাসা কাওরানবাজার এলাকায়। আমার অফিস উত্তরা এলাকায়। তাই নিয়মিত ওই সড়কে যাতায়াত করতে হয়। উড়ালসড়ক চালুর প্রথম দিন ওই সড়ক দিয়েই আমি অফিসে আসি। এটা আমার খুব ভালো লাগছে।
রহিমা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, স্বপ্নের উড়ালসড়ক পাড়ি দিয়েছি। সাধারণ মানুষের জন্য চালুর প্রথম দিনেই আমি পাড়ি দিতে পারছি, এইটা ইতিহাস হয়ে থাকবে আমার জীবনে। পরিবার নিয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে ফার্মগেটে এসেছি।
প্রাইভেটকারের আরও এক যাত্রী বলেন, পরিবার নিয়ে প্রথম দিনেই সড়ক পাড়ি দিচ্ছি। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো লাগার দিন। কত দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করেছি তা বলে শেষ করা যাবে না।
এর আগে, গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। আজ ভোর থেকে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এই অংশের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে ফার্মগেট আসতে সময় লাগছে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।
নতুন এই পথে চলাচলকারীরা মনে করছেন, ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত রুট এটি। ঢাকার এ উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় একদিকে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে, অন্যদিকে নিচের সড়কে গাড়ির চাপ কমবে। এতে দুর্বিষহ যানজটের স্বস্তি মিলবে। বাঁচবে ঢাকাবাসীর অনেক কর্মঘণ্টা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নেওয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া এবং নকশা় জটিলতায় এর নির্মাণ কাজে কেটে গেছে অনেক সময়।
আরও পড়ুন: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কোথা দিয়ে উঠবেন, কোথায় নামবেন, টোল কত
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলে টোল দিতে হবে। এজন্য যানবাহনকে চার শ্রেণিতে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে টোল। এতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চার শ্রেণির যানবাহনের মধ্যে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) ক্ষেত্রে ১৬০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ধরনের ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাকের (৬ চাকার বেশি) ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ টাকার মধ্যে টোল এবং ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীরা চলাচল করতে পারবে না। আর মোটরসাইকেল এখনই চলতে দেওয়া হবে না। এছাড়া গাড়ি নিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
উড়ালসড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়াল সড়ক ১৯.৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে। র্যাম্পসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।
কেআর/এএস