images

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কার্যক্রম, ‘নিষিদ্ধ’ সড়কেও অবাধ চলাচল

খলিলুর রহমান

৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৩ এএম

পাশেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। তবে সেই ভবনের ‘কোল ঘেঁষে’ অবাধে চলাচল করছে মানুষ। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির একটি অংশও ধসে পড়েছে। এতে যাতায়াতের রাস্তাটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ফলে রাজধানীর এই সড়কটি চলাচলের জন্য অনুপযোগীও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিকল্প রাস্তা না থাকায় নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে এই রাস্তা দিয়েই চলাফেরা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বলছি রাজধানীর পুরান ঢাকার মাহুতটুলী এলাকার পুরনো ও জরাজীর্ণ বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির দোতলা ভবন ও এর পাশের রাস্তার কথা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঝুঁকি নিয়েই ওই ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। একাধিকবার এই এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানালেও কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে গত ৩০ জুন বিকেলে ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এরপর নড়েচড়ে বসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ফাঁড়ি কর্তৃপক্ষ। অল্পের জন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেন সিটি করপোরেশনের একাধিক টিম। পরে এলাকার বাসিন্দাদের ওই রাস্তা ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় বিকল্প রাস্তায় চলাচলের নির্দেশনা।

Special-News
সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। ছবি: ঢাকা মেইল

তবে স্থানীয় কাউন্সিলর বিকল্প রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভবনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা দিয়ে যাতে কেউ চলাচল না করেন, সে জন্য সাঁটানো হয়েছে একটি ব্যানারও।

সরেজিমন ঘুরে দেখা গেছে, বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির পাশের গলির রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর ঠিক উপরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। যার উপরের অংশে লেখা আছে; ‘এই রাস্তা অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। আদেশক্রমে মাননীয় মেয়র মহোদয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’

এছাড়াও সেই ব্যানারের একপাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ছবি ও অন্যপাশে স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের ছবি দেওয়া আছে। তবে ব্যানারের নিচে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া থাকলেও একপাশে টিন দিয়ে একটি দরজা তৈরি করা হয়েছে। সেই দরজা দিয়েই মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সবাই যাতায়াত করছেন।

Special-News
বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া থাকলেও একপাশে টিন দিয়ে একটি দরজা তৈরি করা হয়েছে। ছবি: ঢাকা মেইল

ওই দরজা দিয়ে একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, পুলিশ ফাঁড়ির সেই ভবনটির ভেঙে পড়া অংশটুকু পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে পাশের দেয়ালের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো সময় ওই দেয়ালও ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়াও গলির উল্টোদিকের ভবনে দুটি ব্যানার সাঁটানো রয়েছে। সেই ব্যানারগুলোতে লেখা আছে; ‘এখানে প্রসাব করা নিষেধ, ধরা পড়লে ৫০০ টাকা জরিমানা।’ আবার ওই রাস্তার পাশের ড্রেনটিতেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ।

এখানেই শেষ নয়, ঝুঁকিপূর্ণ সেই রাস্তা দিয়ে আরও একটু ভেতরে যেতেই আরও ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য জানা গেল। কয়েকজন এলাকাবাসী জানালেন, সম্প্রতি এই গলিতেই শোক দিবসের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। সে সময়ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে অনুষ্ঠানে আসা লোকজন যাতায়াত করেছেন। যদিও পুলিশ ফাঁড়ির ভবনটি ধসে পড়ার পর বিকল্প একটি রাস্তায় চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন চলাচল করার পর স্থানীয় কাউন্সিলর ওই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।

Special-News
ছোট গলির ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: ঢাকা মেইল 

সরেজমিনে এই অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। ছোট গলির ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা ছিল। সেই রাস্তার প্রবেশ দরজায় এখনও একটি তালা ঝুলানো রয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, এই রাস্তা স্থানীয়র কাউন্সিলরের জায়গার উপর। তাই তিনি তালা দিয়ে রেখেছেন। এ কারণে বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে জানতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডেরে কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১১ নম্বর (ওয়ার্ড নম্বর- ৩১, ৩২, ৩৩) সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নাসরিন রশিদ পুতুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যদিও এর আগে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেছিলেন, ধসের ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে আমরা ভবনের পাশের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের সঙ্গে কথা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার (অঞ্চল-৪) সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সবশেষ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে ডিএসসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৪) মো. আতাহার মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে আমারা মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিছি। এছাড়াও বিকল্প একটি রাস্তায় চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।

Special News
গলির চারদিকে সাঁটানো আছে নানা ব্যানার। ছবি: ঢাকা মেইল

তবে বর্তমানে বিকল্প রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়েই সবাই চলাচল করছে- এ বিষয়ে আপনারা অবগত আছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। আগামীকাল (বুধবার) আমি ঘটনাস্থলে যাব। গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ভবনটি ভাঙার জন্য পুলিশকে নোটিশ দিয়েছি। থানার ওসির কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন।

এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনেই এখনো চলছে বংশাল পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। এ ব্যাপারে জানতে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোস্তাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরাসরি আসেন, কথা বলব।’ এরপর তিনি মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কেআর/আইএইচ