খলিলুর রহমান
২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম
গত ১৮ আগস্ট রাতে নিজের গাড়িতে করে রাজধানীর মগবাজার থেকে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার কার্যালয়ের (ট্যাক্স) কর অঞ্চল-২ এর এক নারী যুগ্ম কমিশনার। পথে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় চালককে মারধর করে তাকে তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। পরবর্তীতে মুক্তিপণ দাবি করে তার ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
তবে অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর কৌশলে জিম্মিদশা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন ওই নারী। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ওই নারীকে অপহরণ এবং নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তবে ইতোমধ্যেই অপহরণের সঙ্গে জড়িত চক্রের তিন সদস্যকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত রাজু।
বৃহস্পতিবার রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সহিদুল ওসমান তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণ করা হয়। তবে অপহরণের প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তিনি কৌশলে মুক্তি পান। ভুক্তভোগী ওই নারী এনবিআরের কর অঞ্চল-২ এ কর্মরত। পরবর্তীতে গত শনিবার (১৯ আগস্ট) এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৮ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ভুক্তভোগী ওই নারী যুগ্ম কমিশনার বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন। একপর্যায়ে সোয়া ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল তার গাড়িটিতে ধাক্কা দেয়। পরে চালক গাড়িটি থামালে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক গাড়ি চালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেন। এরপর তারা ভুক্তভোগী ও গাড়িচালক আনোয়ারকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে আনোয়ারকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভুক্তভোগীকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যান। পরে ওই রাতে সবুজবাগের একটি বাসার গ্যারেজে গাড়িটি ঢোকানো হয়। সেই গাড়িতেই আটকে রেখে তার ওপর রাতভর চলে নির্যাতন।
নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীর চিৎকার যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে পানি চাইলে স্কচটেপ খুলে দেওয়া হয়। এভাবে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ভুক্তভোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন। এরমাঝে ভুক্তভোগীর কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা ছাড়াও একটি দামি মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেন অপহরণকারীরা।
এদিকে, ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে- সম্প্রতি ওই নারী কর্মকর্তার গাড়িচালক মাসুদকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে এ কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে- সেটি তারা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন না। অপহরণকারীরা যেভাবে মারধর করেছেন, হত্যার চেষ্টা করেছেন- সেটি থেকে তাদের ধারণা- ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এমন রোমহর্ষক ঘটনা ভুক্তভোগী ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ থেকেও ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য ফোন করে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থাকা রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সহিদুল ওসমান বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মেইলকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপহরণের পেছনে মূল ঘটনা কী, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কেআর/আইএইচ