images

জাতীয়

রমনায় গুলি করে হত্যাচেষ্টা: নেপথ্যে টাকার ভাগবাটোয়ারা?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:১১ এএম

ঢাকার রমনায় পিস্তলের গুলিতে মানিক নামে এক ব্যক্তি আহত হওয়ার ঘটনায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা নাটক চলছে। তবে টাকার ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। গেল মাসে রমনা আওয়ামী লীগের নেতা ইসমাইল হোসেনের পিস্তলের গুলিতে আহত হন মানিক। পরে সেই নেতা এ ঘটনা চাপা দিতে ছিনতাই নাটক সাজান। কিন্তু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামলে সেই নাটক বেশিদূর গড়ায়নি। ডিবি তাকেসহ মহিউদ্দিন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। ইসমাইল হোসেন ঢাকার শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।

এদিকে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাচ্ছে না। শুধু বলছে, বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে।

আহত মানিক এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় রমনা থানায় আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল ও মহিউদ্দিন নামে দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।

ডিবি পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ ‍জুলাই রমনার একটি ভবনে গুলিবিদ্ধ হন মানিক। মানিক ওই আওয়ামী লীগের নেতার অফিসে কাজ করেন। গুলিবিদ্ধ মানিককে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে নাটক তৈরি করেন আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন। তিনি পুলিশের কাছে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেন। এক সময় তিনি পুলিশকে বলতে থাকেন, মানিককে ছিনতাইকারীরা কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে গুলি করেছে। তিনি খবর পেয়ে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। কিন্তু তার দেওয়া তথ্যের সাথে মাঠ পর্যায়ে পাওয়া তথ্যের কোনো মিল পায়নি ডিবি। ফলে এই ছিনতাই নাটক সাজিয়েও রক্ষা হয়নি। শেষমেশ পুলিশের হাতে তাকেসহ তার এক কর্মচারীকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। গ্রেফতার হলেও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই নেতা। আর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখন আর তেমন কোনো কথাই বলছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইসমাইলের গুলিস্তানে পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। সেই সূত্রে তিনি শ্রমিকদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রমনার বেইলি রোডের পাশে লেক ভিউ অ্যাপার্টমেন্টে তার বাসা। সেই বাসাতে তার নানা অপকর্ম চলে। ঘটনার দিন অপকর্মের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলার সময় মানিককে গুলি করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইলের সঙ্গে কাজ করা এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তার অ্যাপার্টমেন্টে নারীদের আসর বসতো। বিভিন্ন সুন্দরী নারীরা সেখানে যেতেন। এইসব নারীদের দিয়ে তিনি নানা ব্যক্তিকে মনোরঞ্জন করাতেন। সারাদিন মিলে তিন শিফটে চলতো এই মনোরঞ্জনের আসর। প্রতি আসরেই বিভিন্ন নেতা ও আমলারা তার ফ্ল্যাটে যাতায়াত করেন। তবে এর বিনিময়ে ইসমাইলের পকেটে আসত লাখ লাখ টাকা। ঘটনার দিন মূলত সেই টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়েই ঝামেলা হয়। সেই ঝামেলা থেকেই এই ঘটনা।

ওই কর্মচারী আরও বলেন, ইসমাইলের কত টাকা তিনি তা নিজেও জানেন না। সব টাকা তিনি আমেরিকায় পাঠান। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন। তিনি কুমিল্লার একটি উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে পরিবহন ব্যবসা ও ফ্ল্যাটে নারীদের আসর বসিয়ে টাকা কামাই করা তার অন্যতম ব্যবসা ছিল।

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা মুন্নী নামে ইসমাইলের বাসার এক নারী কর্মী জানান, তিনি সেই অফিস থেকে বের হয়ে আসার সময় গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে দেখতে পান সেই আওয়ামী লীগ নেতার কর্মচারী মানিক গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। পরে তাকে অন্যরা ধরে একটি হাসপাতালে নেয়। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রথমে নাটক সাজায় আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গুলিস্তান এলাকার জাকের সুপার মার্কেটে এক সময় নেতৃত্ব দিতেন আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইলের শ্যালক। পরে তাকে নানা অনিয়মের দায়ে বের করে দেওয়ার ঘটনায় বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদের সাথে ইসমাইলের বিরোধ চলছিল। ইসমাইল তার শ্যালকের পক্ষ থেকে ফিরোজকে বিভিন্ন সময়ে হুমকিও দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে তাকে ফাঁসাতে এই নাটক ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বিষয়টি নিয়ে ফিরোজ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, মূলত তার শ্যালকের সাথে বিরোধ থাকায় আমাকে ফাঁসাতেই মানিককে গুলি করে নাটক সাজায় ইসমাইল। আরও বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য মানিককে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে গুলি করা হয়েছে বলে প্রচার করতে শুরু করা হয়। মূলত আমাকে ফাঁসিয়ে আবারও জাকের সুপার মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় তারা।

তিনি আরও বলেন, মানিককে গুলি করা হয়েছে মূলত আমাকে ফাঁসানোর জন্য। কিন্তু পুলিশের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে গেছে।

আরও জানা গেছে, এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হওয়া মানিকের স্ত্রী সাজেদা আক্তার রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন। কিন্তু সেই মামলার পর তাকেও ম্যানেজ করা হয়েছে। ফলে তিনি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে প্রথমদিকে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর দাবি ছিল, তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়েছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা প্রাথমিক ঘটনার সময় বিষয়টি জানতে পারি যে, একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে এ ঘটনায় মামলা হয়। কিন্তু বিষয়টি তদন্ত করছে ডিবি।

ডিবির রমনা জোনের এডিসি মিশু বিশ্বাস ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। এখনো এটি ছিনতাই নাকি কি কারণে মানিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হোক তারপর বলা যাবে।

এমআইকে/এএস